১০ জনের সিন্ডিকেটে জিম্মি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
নিয়োগ ও পদোন্নতির এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রায় ১৪ বছর মাউশিতে কর্মরত পরিচালকের (কলেজ ও শাসন) পিএ মো. ফরহাদ হোসেন ও মো. আছিকুর রহমান (পিএ, এডি এডমিন)। আর তাদের সহযোগি হিসেবে রয়েছেন, মো. হাসানুজ্জামান (সাধারণ প্রশাসন), আবু ওহাব মো. রবিউল আলম (সাধারণ প্রশাসন), নজমুল হোসেন (সরকারি অডিট), শাহাদত হোসেন (সাধারণ প্রশাসন), নিজামুল কবীর (বেসরকারি অডিট), পিএ আব্দুর রহিম (সরকারি কলেজ), কাজী মহসিন (সরকারি কলেজ) ও সানোয়ার হোসেন (স্টোর কিপার)। আর এই সিন্ডিকেট যিনি পরিচালনা করতেন ইতোমধ্যে মাউশির সেই পরিচালককে বদলি করেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। প্রসঙ্গত, রবিবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও শিক্ষার অনিয়ম ও দুর্ণীতি নিয়ে কথা বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরহাদ ২০০৮ সাল থেকে মাউশিতে কর্মরত। এর মধ্যে ১৪ বছর মহাপরিচালক ও পরিচালক (কলেজ ও শাসন) এর পিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। (এর মধ্যে তিন বছর মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদের দপ্তরে ছিলেন)। বর্তমানে পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। তার নামে বেনামে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
রাজধানীর ১২/৩এ, হুমায়ুন রোড, টিকাটুলিতে ১ টি ফ্ল্যাট, ৪১৫/ বি, চৌধুরী পাড়া, খিলগাঁওয়ে আরো একটি ফ্লাট। এছাড়াও নিজ এলাকা নরসিংদীতেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে।
আর আছিকুর রহমানও ২০০৮ সাল থেকে মাউশিতে কর্মরত রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। রাজধানীর বসিলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও তার স্ত্রীর নামে গ্রামের বাড়ীতে কয়েক একর আবাদি জমি কিনেছেন বলে মাউশির একাধিক কর্মচারী নিশ্চিত করেছে। ১৬ ও ১৪ গ্রেডে চাকুরী পেয়েছেন বা ২০ গ্রেড থেকে ১৬ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন এমন প্রার্থীদের টাইপ টেষ্ট নিলে অর্ধেকের বেশি নির্ধারিত গতির অর্ধেক নম্বরও পাবে না। এমনকি কম্পিউটার মেশিন ধরতেও জানে না কেউ কেউ। এই বাণিজ্যটাও পুরো সমন্বয় করেছেন আছিকুর রহমান মো. হাসানুজ্জামান, আবু ওহাব ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে প্রায় ৪২০০ নিয়োগ, ৫ শতাধিক পদোন্নতির কার্যক্রম ২০২৩ ও ২০২৪ সালে হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাউশির প্রশাসন শাখা থেকে বদলী হন। এ সকল কাজ যেন এক অদৃশ্য স্থান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।
নিয়োগে প্রশ্ন ফাঁস, একজনের পরীক্ষা অন্যজনকে দিয়ে দেওয়া, মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, কম্পিউটারে টাইপ পরীক্ষা অন্যকে দিয়ে দেওয়ানো বা দায়িত্বে থাকা লোকদের দিয়ে কপি পেষ্ট করে প্রিন্ট আউট করানো সব কাজই হয় একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। নিয়োগের প্রতি ধাপে ধাপেই সিস্টেম। পুরো নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিলে পদ ভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিলে ১ থেকে ২ লাখ টাকা, টাইপ টেষ্টে পাশ করিয়ে দিতে নেয়া হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা। আর মৌখিক পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা নেওয়া হয়।
নিয়োগের এই বাণিজ্য পুরো সমন্বয় করেছেন ফরহাদ হোসেন, হাসানুজ্জামান, আবু ওহাব মো. রবিউল আলম। ২০ গ্রেড থেকে ১৬ গ্রেডের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক কর্মচারী। পদোন্নতি শর্ত মূল পদের ৩০ শতাংশ পদ শূন্য থাকা স্বাপেক্ষে এসএসসি পাশসহ টাইপ টেষ্টে পাশ করতে হবে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ কর্মচারী কম্পিউটারে টাইপই করতে পারে না। তাদের থেকে ২ থেকে ৩ লাখ করে টাকা নিয়ে পাশ করেছেন মর্মে সুপারিশ করেছেন। টাকার বিনিময়ে তাদের পাশ দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এতে করে অনেক যোগ্য প্রার্থী পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: