মক্কা ও মদিনার আধ্যাত্মিক মর্যাদা তুলনাহীন হলেও বৈশ্বিক পর্যটন
সূচকে মুসলিম ভ্রমণকারীদের সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্যের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল। ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও আধুনিকতার অনন্য সমন্বয়ে শহরটি এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মুসলিম নগরী।
ভোরের আলো ফুটতেই বসফরাসে কুয়াশার স্তর ঝুলে থাকে, মিনারের ছায়া লম্বা হয়ে পড়ে, ফেরি ছুটে চলে জলরাশি ভেদ করে—ধীরে ধীরে জেগে ওঠে ইস্তাম্বুল। আজানের ধ্বনির সঙ্গে সুলতান আহমেদ স্কয়ারে ভিড় করেন পর্যটকরা। কেউ নীল মসজিদ দেখে মুগ্ধ হন, কেউ নাশতার দোকান খোঁজেন, কেউবা গাইডের সঙ্গে ইতিহাস খুঁজতে বের হন—ইস্তাম্বুলের প্রতিদিনের সকালের স্বাভাবিক দৃশ্য।
ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ২০২৪ সালের বৈশ্বিক পর্যটন র্যাংকিং অনুযায়ী, গত বছর শহরটি দুবাই, কুয়ালালামপুর, লন্ডন ও নিউইয়র্ককে ছাড়িয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীকে স্বাগত জানিয়েছে।
কেন ইস্তাম্বুল এত আকর্ষণীয়?
তিন সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ইস্তাম্বুল হাজার বছরের ইতিহাসের ভার বহন করে। আয়া সোফিয়া থেকে কয়েক মিনিট হাঁটার মধ্যেই পাওয়া যায় সাধারণ চায়ের দোকান, যেখানে স্থানীয়রা তাস খেলে চায়ের কাপে চুমুক দেন। পাশে রয়েছে রোমান ধ্বংসাবশেষ, বাইজেন্টাইন সিস্টার্ন, অটোমান স্থাপত্য, আধুনিক শিল্পকলা—সব মিলিয়ে একই গলির ভেতরেই ইতিহাস ও আধুনিকতার সহাবস্থান।
মুসলিম পর্যটকদের কাছে শহরটি ঘরোয়া মনে হয়—মসজিদ সর্বত্র, নামাজের ব্যবস্থা সহজ, হালাল খাবার খুঁজতে হয় না আলাদা করে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও পর্দা–প্রথা এখানকার সামাজিক জীবনের অংশ। পাশাপাশি অমুসলিম পর্যটকরাও এখানে বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য ও আধুনিকতার নতুন অভিজ্ঞতা খুঁজে পান। এই দ্বৈত বৈশিষ্ট্যই ইস্তাম্বুলকে অনন্য করে তোলে।
মক্কা-মদিনা কেন তালিকায় নেই?
ধর্মীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রথম পছন্দ অবশ্যই মক্কা ও মদিনা। হজ ও ওমরাহ মৌসুমে এই দুটি শহরে বিশ্বের কোটি মুসলিম সমবেত হন। তবে সাধারণ পর্যটন র্যাংকিংয়ে এগুলো যুক্ত হয় না—কারণ ইবাদতের উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা ও আনন্দ ভ্রমণ আলাদা শ্রেণিতে বিবেচিত হয়।
এ ছাড়া মক্কা-মদিনায় প্রবেশ মুসলমানদের জন্য সীমিত, অনুমতি–নির্ভর, এবং এগুলো বিনোদনমূলক ভ্রমণের গন্তব্য নয়। এসব কারণেই আন্তর্জাতিক পর্যটন তালিকায় পবিত্র এই দুই শহর অন্তর্ভুক্ত হয় না।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, আধ্যাত্মিক ভ্রমণে মুসলমানদের সর্বোচ্চ গন্তব্য মক্কা ও মদিনা; আর বিশ্রাম, বিনোদন ও ঐতিহ্য–ঘেরা ভ্রমণের জন্য ইস্তাম্বুল পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
ইস্তাম্বুলের প্রতিদ্বন্দ্বী—কুয়ালালামপুর
আন্তর্জাতিক মুসলিম পর্যটনের তালিকায় ইস্তাম্বুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। পরিচ্ছন্ন নগরী, বিশ্বমানের হালাল পর্যটন–সুবিধা, হালাল খাবার—সবকিছু সহজেই পাওয়া যায় এখানে। প্রতি বছর শহরটি ১ কোটি ২০ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীকে আকর্ষণ করে। তবে সংখ্যার দিক থেকে ইস্তাম্বুল এখনো অনেক এগিয়ে।
তুরস্কের ভৌগলিক অবস্থান—ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে থাকা—ইস্তাম্বুলকে আরও সুবিধাজনক করে তুলেছে। বিপরীতে কুয়ালালামপুর মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া–কেন্দ্রিক পর্যটক প্রবাহ পায়।
এসআর
মন্তব্য করুন: