বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার
করেন। কিন্তু নিউজফিডে স্ক্রল করতে করতে নানা সময়ে এমন সব পোস্ট সামনে আসে যা হঠাৎ করে মানুষকে ক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত করে তোলে। ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক—সব প্ল্যাটফর্মেই এখন এমন কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতাকে বলা হয় ‘রেজ বেইট’।
রেজ বেইট কী?
রেজ বেইট আসলে এমন ধরনের পোস্ট বা ভিডিও যা ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করে—অর্ধসত্য, ভুল ব্যাখ্যা, প্রসঙ্গহীন ক্লিপ কিংবা দলগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে মানুষের রাগ বাড়ানোই যার লক্ষ্য। এসব কনটেন্টের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট: ব্যবহারকারীকে আবেগ দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য করা।
কেন এমন কনটেন্ট ভাইরাল হয়?
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম মূলত এনগেজমেন্ট দেখে। কেউ যদি রেগে গিয়ে কমেন্ট করে বা তর্কে জড়ায়, শেয়ার করে—অ্যালগরিদম ধরে নেয় পোস্টটি জনপ্রিয়। ফলে সেই কনটেন্ট আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। অনেক নির্মাতা, পেজ বা ইনফ্লুয়েন্সার এই কৌশল ব্যবহার করেন বেশি ভিউ, ফলোয়ার বা আয়ের জন্য।
কীভাবে রেজ বেইট চিনবেন?
অতিরঞ্জিত বা পক্ষপাতমূলক বক্তব্য
নাটকীয় ও উস্কানিমূলক শিরোনাম
তথ্য কম, আবেগ বেশি
প্রসঙ্গ ছাড়া ছোট ক্লিপ
যাচাইহীন ‘ব্রেকিং’ দাবি
মন্তব্যে ঝগড়া বাধানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা পোস্ট
যে কোনো কনটেন্ট যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাগ, ঘৃণা বা বিভাজন বাড়ায়, তা রেজ বেইটের অন্তর্ভুক্ত।
কেন এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর?
ভুল তথ্য দ্রুত ছড়ায়
ধর্ম, রাজনীতি বা গোষ্ঠীভিত্তিক বিভাজন বাড়ায়
আস্থা ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল করে
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
অনলাইন আলোচনার মান নষ্ট হয়
রেজ বেইট এখন ডিজিটাল সমাজে অস্থিরতা তৈরির বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
কী করবেন?
রাগের বশে কমেন্ট না করা
তথ্য যাচাই করে দেখা
সন্দেহজনক পেজ/প্রোফাইল আনফলো করা
উত্তেজনামূলক কনটেন্ট স্ক্রল করে এড়িয়ে যাওয়া
ক্ষতিকর পোস্ট রিপোর্ট করা
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সচেতন থাকা—নইলে আমাদের আবেগ অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
অক্সফোর্ডের ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’: রেজ বেইট
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০২৫ সালের জন্য ‘রেজ বেইট’–কে তাদের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, গত এক বছরে এই শব্দের ব্যবহারে তিনগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। অনলাইন এনগেজমেন্ট বাড়াতে যে প্রভাবশালী কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে রেজ বেইট সবচেয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়ায় এটি অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শব্দ—অরা ফার্মিং ও বায়োহ্যাক—কে পেছনে ফেলেছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: