মিরপুরের ২২ গজে আবারও বাজছে স্পিনের রাজত্বের বাঁশি।
টনি হেমিংয়ের হাতে পিচের রূপ বদলাবে—এমন প্রত্যাশা ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু বাংলাদেশ দলের নতুন কিউরেটরের বানানো এই উইকেটও শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনল মিরপুরের চেনা রূপ—স্পিনের জন্য স্বর্গ, ব্যাটারদের জন্য দুঃস্বপ্ন। আর এই ধ্বংসস্তূপের স্থপতি এক তরুণ লেগ স্পিনার—রিশাদ হোসেন।
২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৯ ওভারেই ১০১ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ছয় উইকেটের পাঁচটিই তুলে নিয়েছেন রিশাদ! তার অবিশ্বাস্য বোলিং ফিগার—৭ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট।
ইনিংসের ১৪তম ওভারেই প্রথম আঘাত হানেন রিশাদ। এলবিডব্লু করে ফেরান অ্যালিক অ্যাথানেজকে। তখন স্কোরবোর্ডে ৫১ রান—বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের ১৪ বছর পর প্রথম ৫০ ছাড়ানো উদ্বোধন। কিন্তু সেই স্বস্তি টিকল না বেশিক্ষণ।
ধৈর্য ধরে ৬০ বলে ৪৪ রান করা ব্রেন্ডন কিংকেও থামিয়ে দেন রিশাদ। নিখুঁত এক লেগ–ব্রেকে পরাস্ত হয়ে নুরুল হাসানের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরতে হয় তাকে। একই ওভারে রাদারফোর্ডকেও ফিরিয়ে দেন রিশাদ—দুজনই উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর অফ স্টাম্পের বাইরে বল ছোঁয়া নিয়ে রিভিউ নিয়েও রোস্টন চেজ বাঁচতে পারেননি। গ্যালারি তখন উল্লাসে ফেটে পড়ছে।
এর আগে কিসি কার্টিকে স্লিপে ক্যাচ করিয়ে তুলে নিয়েছিলেন রিশাদের দ্বিতীয় শিকার। একের পর এক আঘাতে গতি হারিয়ে ফেলে উইন্ডিজের রান তাড়া।
এই ম্যাচে রিশাদ যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ২/৩৭—এবার সেটাকে অনেক পেছনে ফেলে মাত্র ২৫ রান খরচায় পাঁচ শিকার তুলে নিয়েছেন।
মিরপুরের টার্নিং উইকেটে শুরুটা ভালো করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ—প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছিল ৪৫ রান। কিন্তু রিশাদের ঘূর্ণি জাদু শুরু হতেই পাল্টে যায় ম্যাচের রঙ। এখন জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের করতে হবে ৩১ ওভারে ১০৬ রান, হাতে আছে মাত্র ৪ উইকেট।
রিশাদের স্পিনে কিং, রাদারফোর্ড, চেজদের চোখে এখন আতঙ্কের ছায়া। অন্যদিকে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মুখে ফুটে উঠেছে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। যদি কোনো অঘটন না ঘটে, তাহলে বলা যায়—এই ম্যাচ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র বাংলাদেশের জন্য।
এসআর
মন্তব্য করুন: