[email protected] শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেঞ্চে বসেই নেতৃত্ব! অধিনায়ক জামালকে ঘিরে প্রশ্নের ঝড়

এম. এ. রনী

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৫ ৩:৩৩ পিএম

নেতৃত্বে আছেন, কিন্তু মাঠে নেই—এই দ্বৈত বাস্তবতায় পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দীর্ঘদিনের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। সিঙ্গাপুরের ম্যাচের আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পাশে বসে ছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের সামনে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে কথা বললেও স্পষ্ট ছিল—খেলার সুযোগ নিয়ে তাঁর ভেতরে রয়েছে চাপা হতাশা।

১০জুন সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর। এর আগেই সবার দৃষ্টি কেড়েছে এক প্রশ্ন—অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া কি মূল একাদশে থাকছেন? সাম্প্রতিক ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে এক মিনিটের জন্যও জামালকে মাঠে নামাননি কোচ। 

সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন উঠতেই জামাল খোলামেলা স্বীকার করেন, “আমি অবশ্যই খেলতে চাই, দশ মিনিট হলেও। আমি সবসময় প্রস্তুত থাকি দলের জন্য। তবে সিদ্ধান্তটা কোচের।” তাঁর কথায় দায়িত্বশীলতা থাকলেও চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ।

তাহলে কি জামাল বেঞ্চ অধিনায়ক? জাতীয় দলের অভ্যন্তরেই আলোচনার কেন্দ্রে এই বিষয়টি—তাহলে কি জামাল এখন কেবল ‘বেঞ্চ অধিনায়ক’? ২০১৩ সালে বাংলাদেশ দলে প্রবাসী হিসেবে প্রথম আগমন হয় জামালের। এরপর ২০১৮ সাল থেকে হয়ে ওঠেন জাতীয় দলের কাণ্ডারি। প্রবাসী হিসেবে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন একা, তা এখন ছয়জনের বহরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বসুলভ ব্যক্তিত্ব সত্ত্বেও তাকে খেলানো হচ্ছে না, এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবল বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকরাও।

বাংলাদেশ কোচের পরিকল্পনায় ছিদ্র? যেখানে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর সিঙ্গাপুর ম্যাচে নতুন পরিকল্পনার প্রত্যাশা ছিল, সেখানে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কোনো দৃশ্যমান ট্যাকটিক্সই দেখা যায়নি। বাংলাদেশের খেলার ধরনে ছিল না কোনো পূর্বপরিকল্পনার ছাপ, নেই বল কন্ট্রোলের মুনশিয়ানা কিংবা প্র্যাকটিসের ধারাবাহিকতা। রক্ষণভাগে এলোমেলো সিদ্ধান্ত, মাঝমাঠে বারবার বল হারানো, আক্রমণে ধীরগতি—সব মিলিয়ে পুরো দলেই ছিল কোচের অদক্ষতার প্রতিচ্ছবি।

এর মধ্যে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে কেবল মাঠ নয়, ড্রেসিংরুমেও ভাঙন তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা ফুটবল বোদ্ধাদের।

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে কোচ নতুনদের ওপর আস্থা রাখলেও, অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন না করাটা ব্যাকফায়ার করেছে বলেই মত সমর্থকদের। দলের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠছে—শুধু খেলার বাইরে রেখে নয়, নেতাকেও কিভাবে মানসিকভাবে চাপে ফেলা হচ্ছে?

এদিকে ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে এখনও বাকি চারটি ম্যাচ। এই পর্বে সামনের প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে কৌশল না থাকলে এবং সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে, বাংলাদেশের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসবে।

ফলে এই মুহূর্তে দলীয় ঐক্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বচ্ছতা এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান ও ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। নইলে সাফল্য আসা দূরের কথা, দলের মধ্যকার ভারসাম্য হারিয়ে যেতে পারে।

জাতীয় দলের নেতৃত্ব মানে কেবল টস করা নয়, এটি দলের মনোবল ও নৈতিক দিক নির্দেশনার কেন্দ্রবিন্দু। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে জামাল ভূঁইয়ার প্রতি কোচের অনাস্থা কেবল একজন খেলোয়াড় নয়, পুরো দলের কাঠামোকে নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। এখন সময় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার, কারণ সময় গড়াচ্ছে, আর প্রতিপক্ষেরা শক্তিশালী।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর