হারের পরও আশাবাদের বার্তা দিলেন হামজা চৌধুরী। ভরা গ্যালারি, তুমুল সমর্থন, মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ দর্শক। এ যেন নতুন স্বপ্ন দেখার উপলক্ষ। কিন্তু শেষটা হলো চরম হতাশায়। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে নিজেদের মাঠে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেল বাংলাদেশ। প্রবাসী তারকা হামজা চৌধুরী ও সামিত সোমদের আগমনে যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল দেশের ফুটবলে, মাঠে তার প্রতিফলন দেখা গেল না।
স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শকের আবেগের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও মাঠে ছিল শুধুই ছন্দপতন। বাংলাদেশের খেলায় ছিল না কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছাপ। স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কৌশলহীন দল পরিচালনা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে পুরো স্টাফ দলকে। পুরো ৯০ মিনিট জুড়েই ছিল এলোমেলো পাসিং, সমন্বয়ের অভাব এবং ভুল সিদ্ধান্ত।
কৌশলের অভাবে পরিকল্পনাহীন বাংলাদেশ :
ম্যাচের শুরুতেই মূল অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে বেঞ্চে রেখে একাদশে আনা হয় কানাডা লিগে খেলা সামিত সোমকে। নতুনদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়ে ম্যাচের বাস্তবতায় খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে উই-ইয়াংয়ের ভলিতে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয়ার্ধে ফান্দির গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করলে রাকিবের একমাত্র গোল শুধু ব্যবধানই কমায়। আক্রমণভাগে সামান্য চেষ্টাও ছিল এলোমেলো। ফ্রি কিক, কর্নার বা ওপেন প্লে— কোথাও কোনও পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। কোচের স্ট্র্যাটেজির সম্পূর্ণ অভাব ফুটে ওঠে প্রতিটি খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সে।
হতাশার মাঝে আশার আলো ছড়ালেন হামজা :
দলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হলেও নিজ দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি রাখেননি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। মাঠে ছিলেন নিবেদিত, বল কন্ট্রোল ও প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে গোলের সুযোগ তৈরি করতেও ভূমিকা রেখেছেন।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থকদের উদ্দেশে হামজার বার্তা নতুন করে আশাবাদের সঞ্চার করেছে—
“আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম, তা হয়নি! কিন্তু দল ও জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি!! আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে, কারণ এটা তো মাত্র শুরু। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাব, যেখানে পৌঁছাতে চাই! ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। দেখা হবে অক্টোবরে।”
গ্রুপ সি-এর জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ :
সিঙ্গাপুর ম্যাচে হারের পর বাংলাদেশ ‘সি’ গ্রুপে ১ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে। হংকংয়ের কাছে হেরে ভারতেরও পয়েন্ট সমান ১ হলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে তারা আছে চতুর্থে। গ্রুপের শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। গ্রুপের অন্য দল হংকংও ৪ পয়েন্ট নিয়ে সমানে পাল্লা দিচ্ছে।
গ্রুপ পর্যায়ে এখনো বাকি আছে ৪টি করে ম্যাচ। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি এএফসি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেবে। সেক্ষেত্রে বাকি প্রতিটি ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কৌশলহীনতা, পরিকল্পনার অভাব এবং একাদশ নির্বাচন নিয়ে যেভাবে প্রশ্ন উঠছে, তাতে কোচ কাবরেরার জন্য সামনে সময়টা সহজ যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মাঠে শক্তি ও সাহস আছে বাংলাদেশ দলের। আছে প্রতিভা ও সম্ভাবনা। কিন্তু যে জিনিসটি স্পষ্টভাবে অনুপস্থিত ছিল, তা হলো কৌশলগত প্রস্তুতি ও সংগঠিত পরিকল্পনা। সেই দিক থেকে কোচ কাবরেরার দিকেই এখন সবার নজর। আর সমর্থকরা তাকিয়ে হামজার মতো নেতাদের দিকে, যারা কেবল মাঠে নয়, মনের ভিতরেও লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এসআর
মন্তব্য করুন: