 
                                                                        আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় নাটকীয় এক ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াই শেষে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে নেশন্স লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করল পর্তুগাল। দুইবার পিছিয়ে পড়েও সমতা ফিরিয়ে টাইব্রেকারে বাজিমাত করে রবের্তো মার্তিনেসের দল।
স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা যখন গোলের লক্ষ্যে শট নেন, তখন পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা ছিলেন প্রাচীরের মতো অটল। তার সেই দুর্দান্ত সেভের পর রুবেন নেভেস যখন জাল খুঁজে নেন, তখন চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে উদযাপনে মেতে ওঠেন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও তার সতীর্থরা।
রোববার মূল ম্যাচ ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-২ গোলে সমতায় শেষ হয়। এরপর টাইব্রেকারে স্পেনকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে পর্তুগাল। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলল তারা। এর আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে inaugural আসরেই শিরোপা জিতেছিল পর্তুগাল।

পঞ্চম মিনিটেই প্রথম বড় সুযোগ পায় পর্তুগাল। ব্রুনো ফার্নান্দেসের কর্নার থেকে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়ে জোয়াও নেভেস ভলি করতে ব্যর্থ হন।
স্পেন প্রথম সুযোগ পায় ১৫তম মিনিটে। নিকো উইলিয়ামসের কাট ব্যাকে বল পেয়ে শট নেন পেদ্রি, কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। দুই মিনিট পর উইলিয়ামসের আরেকটি শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
ম্যাচের ২০তম মিনিটে আসে প্রথম গোল। লামিনে ইয়ামালের ক্রস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন রুবেন দিয়াস। উইলিয়ামসের চ্যালেঞ্জের মুখে বল ধরতে না পারা কস্তার ভুলের সুযোগ নিয়ে বল জালে পাঠান অরক্ষিত মার্টিন জুবিমেন্দি।
তবে পর্তুগাল ফিরে আসে দ্রুতই। ২৫তম মিনিটে পেদ্রো নেতোর পাস পেয়ে দুর্দান্ত শটে গোল করেন পিএসজির ডিফেন্ডার নুনো মেন্দেস, ম্যাচে ফেরে সমতা।
২৯তম মিনিটে আবারও সুযোগ পায় স্পেন। ইয়ামালের ক্রস ও উইলিয়ামসের চ্যালেঞ্জে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুযোগ হাতছাড়া হয়।
৪৫তম মিনিটে স্পেন আবার এগিয়ে যায়। পেদ্রির চমৎকার রক্ষণচেরা পাস ধরে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন মিকেল ওয়াইরসাবাল।

দ্বিতীয়ার্ধের ৪৯তম মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেসের গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। এরপর ৫৪তম মিনিটে ফাবিয়ান রুইসের দূরপাল্লার শট দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন কস্তা।
শেষ পর্যন্ত ৬১তম মিনিটে সমতা ফেরান ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। নুনো মেন্দেসের ক্রস বিপক্ষ খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে তার সামনে এলে সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। এটি ছিল রোনালদোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৩৮তম গোল।
৮৩তম মিনিটে ইসকো একটি জোরালো শট নেন, কিন্তু সেটি কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন কস্তা। এরপর ৮৭তম মিনিটে হঠাৎ করেই মাঠে বসে পড়েন রোনালদো। পরক্ষণেই ইঙ্গিতে জানান তিনি আর খেলতে পারছেন না। ৮৮তম মিনিটে তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গনসালো রামোস।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফার্নান্দেসের ফ্রি-কিক দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমোন।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই মেন্দেসের সুযোগ নষ্ট হয়। পর্তুগাল কিছুক্ষণ দারুণ আক্রমণ করে, পরে স্পেন পাল্টা আক্রমণে বেশ কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু গোল আসেনি। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে পর্তুগালের হয়ে গনসালো রামোস, ভিতিনিয়া, ব্রুনো ফার্নান্দেস, নুনো মেন্দেস ও রুবেন নেভেস গোল করেন। স্পেনের হয়ে প্রথম তিন শটে সফল হন মিকেল মেরিনো, আলেক্স বায়েনা ও ইসকো। কিন্তু চতুর্থ শটে ব্যর্থ হন অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। তার শট ফিরিয়ে দিয়ে দিয়েগো কস্তা হয়ে ওঠেন নায়ক।
ম্যাচজুড়ে বল দখল ও শটের দিক থেকে স্পেন এগিয়ে ছিল। তারা ৬১ শতাংশ সময় বলের নিয়ন্ত্রণে রেখে ১৬টি শট নেয়, যার ছয়টি লক্ষ্যে ছিল। পর্তুগালের মাত্র সাতটি শটের মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে, এবং দুইটিই গোল হয়। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে পর্তুগালই।
চারটি দুর্দান্ত সেভ করে মূল ম্যাচে দলকে টিকিয়ে রাখা দিয়েগো কস্তা টাইব্রেকারে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। তার হাত ধরেই পর্তুগাল হয়ে ওঠে নেশন্স লিগে প্রথম দল, যারা একাধিকবার শিরোপা জিতল।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে এসে এটি আরও একটি অনন্য অর্জন। নেশন্স লিগের এই জয়ে আবারও প্রমাণ হলো, পর্তুগাল এখনো ইউরোপিয়ান ফুটবলে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি।
এসআর
মন্তব্য করুন: