বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারকে আরও দুই বছরের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে তাঁর নতুন মেয়াদ। বাফুফের এই সিদ্ধান্ত কেবল দলের জন্য নয়, বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ব্রিটিশ কোচের নেতৃত্বে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপসহ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দলের পারফরম্যান্স নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
কোচ হিসেবে বাটলারের প্রোফাইল ও অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ। পিটার বাটলার একজন অভিজ্ঞ কোচ। বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল ও শীর্ষস্থানীয় ক্লাব কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁর ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলগুলোর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কোচিংয়ে আধুনিক ফুটবলের কৌশল এবং ফিটনেসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। উন্নত ফিটনেসের সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তা তৈরিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসিত। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ সাফল্য গড়ার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা বড় ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের ফুটবলে সিনিয়র-জুনিয়র ভারসাম্য ও দূরত্বের সমস্যা গত সাফ থেকে পরিলক্ষিত। নারী ফুটবল দলের বর্তমান সাফল্যের পেছনে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ত্যাগ এবং অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে অতীতের সাফল্য ধরে রাখতে সিনিয়রদের প্রাধান্য দিয়ে উঠতি ফুটবলারদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে।
বাটলার সিনিয়র এবং জুনিয়রদের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে কাজ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা নয়, বরং ফিটনেস ও বর্তমান পারফরম্যান্সই নির্বাচনের মূল মাপকাঠি হওয়া উচিত। তাঁর এই নীতির কারণে কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নেপালের কাঠমান্ডু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব সামনে আসে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর কৌশল এবং নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়।
বাটলার গত সাফ থেকেই সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করেছেন এবং খেলোয়ারদের মধ্যে ঐক্য আনার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের নারী ফুটবলে সিনিয়রদের নেতৃত্বে একটি অঘোষিত সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, যা অনেক সময় দলীয় ঐক্যের পথে বাধা তৈরি করেছে। বাটলার এই সিন্ডিকেট ভেঙে একটি নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক দল গঠনের চেষ্টা করছেন। তাঁর পরিকল্পনা দলের ভেতরের রাজনীতিকে দূর করে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক সংস্কৃতি তৈরি করা। এটি শুধু বর্তমান সময়ে নয়, ভবিষ্যতে দলের সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করবে।
বাটলারের অধীনে কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় তাঁদের অবমূল্যায়িত মনে করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী ফুটবলার বলছেন, কোচ তাঁদের অবদানের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাননি। এতে তাঁরা ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তবে কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে এই দূরত্ব কমাতে বাফুফে সভাপতির হস্তক্ষেপ জরুরি। ফুটবলাররা সভাপতির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চান, যা সংকট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
বাটলারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য আশা দেখতে পারে। পিটার বাটলার কেবল একজন সফল কোচই নন, তিনি পরিবর্তনের হাল ধরতে সক্ষম একজন নেতা। তাঁর কৌশল এবং লক্ষ্য শুধু দলীয় সাফল্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছেন। তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের গড়ে তোলা, ফিটনেস ও মানসিক দৃঢ়তার ওপর জোর দিয়ে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর লক্ষ্য তাঁর।
বাটলার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপসহ ২০২৬ সালের অন্যান্য প্রতিযোগিতায় একটি প্রতিযোগিতামূলক দল গঠনের জন্য কাজ করছেন। তরুণ প্রজন্মের জন্য তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।
বাফুফের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, পিটার বাটলারের ওপর তাদের আস্থা দৃঢ়। সিনিয়র-জুনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে ভারসাম্য আনতে এবং দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাটলার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত নেতা।
তাঁর অধীনে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল শুধুমাত্র এশিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজের অবস্থান শক্ত করবে। তরুণ প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গড়া দল বাংলাদেশকে আরও বড় সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
পিটার বাটলারের নতুন মেয়াদে চুক্তিটি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ার একটি সুযোগ। সংকট মোকাবিলা করে দলীয় ঐক্য তৈরি করা এবং ফিটনেস-ভিত্তিক সংস্কৃতি চালু করার মাধ্যমে তিনি একটি প্রতিযোগিতামূলক দল গঠন করবেন। সিনিয়রদের আধিপত্য ভেঙে তরুণদের সামনে আসার সুযোগ করে দেওয়া তাঁর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশের ফুটবলে এই পরিবর্তন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। বাটলারের নেতৃত্বে সাফল্যের এই যাত্রা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নাম আরও উজ্জ্বল করবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: