ভারতীয় ক্রিকেটে আবারও বিতর্কের ঝড়। এবারের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশি টিভি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ এবং ভারতীয় ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়াল। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির মেলবোর্ন টেস্টে শরফুদ্দৌলার একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হওয়া আলোচনা এখন ক্রিকেটবিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় অন্ধ অবিচক সমর্থকের কাছে সৈকত এখন ভিলেন ওমরেশ পুরির চরিত্রে।
ঘটনা কোথায় শুরু মেলবোর্ন টেস্টের পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে ভারত ড্রয়ের লক্ষ্যে লড়ছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪ উইকেট। ভারতের ভরসা তখন অপরাজিত থাকা ৮৪ রানের ইনিংস খেলা যশস্বী জয়সওয়াল। ঠিক এমন সময় প্যাট কামিন্সের বলে অ্যালেক্স ক্যারি উইকেটের পেছনে ক্যাচের আবেদন করেন। অনফিল্ড আম্পায়ার নটআউট দিলে রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া।
টিভি আম্পায়ার হিসেবে শরফুদ্দৌলা রিপ্লে পর্যবেক্ষণ করেন। রিপ্লেতে বল ব্যাট এবং গ্লাভস স্পর্শ করেছে এবং গতি কমেছে ষ্পষ্ট ভাবেই খালি চোখে দেখা গিয়েছে।। তবে স্নিকোমিটার প্রযুক্তিতে বলের স্পর্শ সঠিকভাবে শনাক্ত হয়নি। আইসিসির নিয়ম ও দৃশ্যমান প্রমাণের ভিত্তিতে শরফুদ্দৌলা জয়সওয়ালকে আউট ঘোষণা করেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়াতে ছিল অহমিকার বহিঃপ্রকাশ। আউটের পরপরই জয়সওয়াল মাঠে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এমনকি ম্যাচ শেষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সহসভাপতি রাজীব শুক্লা এবং সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারও শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
অপরদিকে ভারতের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার সুরিন্দর খান্না সাফ জানিয়ে দেন, “জয়সওয়াল স্পষ্টভাবেই আউট ছিলেন। শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক।” তিনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের দ্বিমুখী আচরণ এবং মিথ্যাচারের প্রবণতার কড়া সমালোচনা করেন।
বিশ্বজুড়ে চলছে ভারতের ক্রিকেট মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন। মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয় এবং শরফুদ্দৌলার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তাদের মানসিক দুর্বলতাকে প্রকাশ্যে এনেছে। টেস্টে ১২৩ রানে ৩ উইকেট থেকে তারা ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারে। অথচ এমন ব্যর্থতাকে আড়াল করতে তারা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সুরিন্দর খান্না আরো বলেন, “ভারতের খেলোয়াড়রা মাঠে সৎ আচরণ করতে পারেন না। বল ব্যাটে লেগেছে কি না, সেটা তো নিজেরাই বুঝতে পারার কথা। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়রা শুধু আইপিএলে রান তুলতেই পছন্দ করে। সেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ভালো খেললেও, জাতীয় দলের হয়ে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং মেনে নেওয়া যায় না।”
ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের আচরণ বরাবরই দ্বিমুখী। সুবিধা পেলেই দেবতাতুল্য আম্পায়ার! ভারতীয় দল ও সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের আচরণ আগেও দেখা গেছে। যখন কোনো সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে যায়, সেটি দেবতাতুল্য বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু তাদের বিপক্ষে গেলেই শুরু হয় সমালোচনা এবং আম্পায়ারদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।
মেলবোর্ন টেস্টে শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত এই সত্যকেই আবারও প্রকাশ করেছে। প্রযুক্তির বাইরে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতায় সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও ভারতীয় ক্রিকেটারদের এমন অহেতুক সমালোচনা তাদের ক্রিকেটীয় নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ক্রিকেটবিশ্বে ভারতের বর্তমান অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। ক্রিকেট শুধু ব্যাট-বলের খেলা নয়, এটি সৎ আচরণ এবং খেলার চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভারতের মতো বড় ক্রিকেট পরাশক্তি যদি অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে আম্পায়ারদের দোষারোপ করতে থাকে, তাহলে তা ভবিষ্যতে খেলার নৈতিক মানকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
মেলবোর্ন টেস্টের এই বিতর্ক ক্রিকেটবিশ্বে ভারতের দ্বিমুখী চরিত্র এবং নিজেদের দোষ আড়াল করার প্রবণতাকেই আরেকবার স্পষ্ট করেছে। এখন সময় এসেছে ভারতীয় ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের নিজেদের ভুল স্বীকার করার এবং খেলার প্রতি সৎ থাকার।
এসআর
মন্তব্য করুন: