২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১০১ রানের বড় জয়ে টাইগাররা সিরিজে ১-১ সমতা নিয়ে দেশে ফিরছে। প্রথম টেস্টে বিশাল ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান জাকের আলি, তাইজুল ইসলাম এবং নাহিদ রানা। এই জয় বাংলাদেশের ২০২৪ সালের তৃতীয় বিদেশের মাটির জয়, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন।
প্রথম ইনিংসে সংগ্রামের পর জাকেরের বিস্ফোরক ইনিংস: প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর নেতৃত্ব দেন জাকের আলি। চতুর্থ দিনের সকালে তার ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস টাইগারদের লিডকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়। পাঁচটি ছক্কা এবং আটটি চারের সাহায্যে চতুর্থ দিনের সকালে দলের ৭৫ রানের মধ্যে ৬২ রানই আসে তার ব্যাট থেকে।
জাকেরের ইনিংসটি ছিল সাহসিকতা এবং দাপুটে ব্যাটিংয়ের এক অনন্য উদাহরণ। চতুর্থ দিনের শুরুতেই আলজারি জোসেফের একটি বাউন্সার তার হেলমেটে আঘাত হানে। তবে ফিজিও বায়েজিদ ইসলাম খান কিছুক্ষণ চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে খেলতে অনুমতি দেন। সেই ধাক্কা সামলে জাকের দ্রুতই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
কেমার রোচের বল ওভার দ্য কিপার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানোর পর পরের বলেই দুর্দান্ত হুক শটে ছক্কা হাঁকান। এটি ছিল তার টানা তিন টেস্টে তৃতীয় অর্ধশতক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কেবল জাকির হাসান এই কীর্তি গড়েছিলেন।
জাকেরের শট নির্বাচন এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের চাপে ফেলে দেয়। শামার জোসেফ এবং রোচের বল একের পর এক বাউন্ডারিতে পরিণত করতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শামারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে বাংলাদেশকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানে পৌঁছে দেন।
তাইজুলের স্পিনের জাদু: শেষ ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮৫ রানে গুটিয়ে দিতে তাইজুল ইসলামের বোলিং ছিল অবিস্মরণীয়। ৫০ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ক্যারিবিয়ান মাটিতে নিজের প্রথম পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়েন। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৫তম পাঁচ উইকেট শিকার এবং বিদেশের মাটিতে চতুর্থ।
তাইজুলের বোলিং আক্রমণ শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কাঁপিয়ে দেয়। হজকে একটি নিচু ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ আউট করার মাধ্যমে তার উইকেট শিকারের ধার শুরু হয়। এরপর একে একে আরও চারজন ব্যাটারকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করেন তিনি।
নাহিদ রানার প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার: প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানা দুর্দান্ত বোলিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অলআউট করেন। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার। তার বোলিংয়ের গতি এবং নিখুঁত লাইন-লেন্থ স্বাগতিক ব্যাটারদের বিপাকে ফেলে। দ্বিতীয় ইনিংসে শামার জোসেফকে একটি দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন রানা।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট: দ্বিতীয় ইনিংসে রানার বল হাতে পাঁচ উইকেট শিকার এবং জাকের আলির সাহসী ব্যাটিং বাংলাদেশের জয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। শেষ ইনিংসে তাইজুলের সুনিপুণ স্পিন এবং হাসান মাহমুদের পেস অ্যাটাক ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোয়ার অর্ডারকে দ্রুত সাজঘরে ফিরিয়ে দেন। হাসান মাহমুদ দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি, তাসকিন আহমেদ দুটি এবং রানা একটি উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়কে সহজ করে তোলেন।
বাংলাদেশের জন্য নতুন সূচনা: এই ঐতিহাসিক জয়ে ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের হতাশার পর দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই জয়ের ধারাকে ধারাবাহিকভাবে রেখে বাংলাদেশের ক্রীকেটকে অগ্রসর করে নেয়ার দায়িত্ব নিতে হবে শক্ত হাতে
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৬৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৯.৫ ওভারে ২৬৮ (আগের দিন ১৯৩/৫) (জাকের ৯১, তাইজুল ১৪, মুমিনুল ০, হাসান ৩, তাসকিন ০, নাহিদ ১*; সিলস ১৫.১-৩-৪৬-১, আলজারি জোসেফ ১৫.৫-১-৭৭-৩, শামার জোসেফ ১২-০-৮০-২, গ্রেভস ৮-১-২০-১, হজ ১-০-৪-০, রোচ ১০-০-৩৬-৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৫০ ওভারে ১৮৫ (ব্র্যাথওয়েট ৪৩, লুই ৬, কার্টি ১৪, হজ ৫৫, আথানেজ ৫, গ্রেভস ২০, জশুয়া ১২, আলজারি জোসেফ ৫, রোচ ৮, সিলস ১*, শামার জোসেফ ৮; হাসান ৬-০-২০-২, তাসকিন ১০-০-৪৫-২, তাইজুল ১৭-৫-৫০-৫, নাহিদ ৯-২-৩২-১, মিরাজ ৮-০-৩১-০)।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম।
ম্যান অব দা সিরিজ: তাসকিন আহমেদ ও জেডেন সিলস।
ফলাফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী
টেস্ট সিরিজ শেষে এবার ওয়ানডের লড়াই। সেন্ট কিটসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু আগামী রোববার।
এসআর
মন্তব্য করুন: