ফুটবল মাঠে দর্শকদের মাঝে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়, তবে গিনির এনজেরেকোরে এক ফুটবল ম্যাচের ঘটনায় যে প্রাণহানি ঘটেছে, তা শুধু হৃদয়বিদারক নয়, বরং ফুটবলের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে অন্তত ১০০ জন সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে, এনজেরেকোরে আয়োজিত এই ম্যাচের মূল উদ্দেশ্য ছিল গিনির সামরিক শাসক ও স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট মামাদি দৌমবৌয়াকে সংবর্ধনা দেওয়া। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আন্তর্জাতিক বিরোধিতার মুখে পড়েন দৌমবৌয়া। ২০২4 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি এই ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করেন।
তবে ম্যাচ চলাকালে রেফারির একটি সিদ্ধান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করে। মাঠের দর্শকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সূত্র ধরে কয়েকজন দর্শক মাঠে প্রবেশ করেন এবং দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সংঘর্ষ মাঠ থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা এনজেরেকোর থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, আশেপাশের এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে জানা যায়, এই ঘটনায় নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে স্থানীয় হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, মর্গ লাশে পরিপূর্ণ। “হাসপাতালে যতদূর চোখ যায়, শুধু লাশের সারি। হলওয়েতেও মরদেহ রাখা হয়েছে।” এই মুহূর্তে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০ জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তায় বিশৃঙ্খলার দৃশ্য। রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে রাস্তার উপর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী যথেষ্ট ব্যর্থ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
গিনির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই সংঘর্ষে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মামাদি দৌমবৌয়া দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। ক্ষমতা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তার কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গিনির সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তির দাবি তুলেছে।
গিনির ফুটবল ইতিহাসে এই ঘটনা একটি ট্র্যাজেডি হয়ে থাকবে। ফুটবল যেখানে মানুষকে একত্রিত করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, সেখানে এমন সহিংসতা পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি দুঃখজনক দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
এসআর
মন্তব্য করুন: