[email protected] মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
১৬ পৌষ ১৪৩১

বিসিবি-র জোড়াতালির সংস্কৃতি, সিদ্ধান্তহীনতায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

এম. এ. রনী

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১০ এএম
আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৩ এএম

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনার অভাব এবং তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর কারণে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বিশেষত কোচিং স্টাফ নির্বাচন এবং খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনায় বিসিবির ধারাবাহিকতার অভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের পারফরম্যান্সকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ডমিঙ্গো অধ্যায়: সস্তার মাঝে স্থায়িত্বের অভাব, ২০১৯ সালে রাসেল ডমিঙ্গোকে জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন। তবে হেড কোচ হিসেবে তার নিয়োগের পেছনে প্রধান কারণ ছিল তার তুলনামূলক কম পারিশ্রমিক। বিসিবি মূলত কম খরচে একজন কোচ পেতে গিয়ে ডমিঙ্গোকে বেছে নেয়। কিন্তু তার তিন বছরের মেয়াদে তিনি ক্রিকেটারদের মাঝে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেননি। বরং তার কোচিং পদ্ধতি নিয়ে ক্রিকেটারদের অসন্তোষ এবং বোর্ড কর্মকর্তাদের ক্ষোভ স্পষ্ট হয়।

 

ডমিঙ্গোর সময়ে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কোচিং স্টাফদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। তার অধীনে বাংলাদেশ দলে কোনো নির্দিষ্ট কৌশল বা খেলার ধরন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে ২০২২ সালে তাকে বিদায় জানানো হলেও দলে স্থায়িত্বের অভাব থেকেই যায়।

 

বারমুডার হেম্প থেকে পোথাস: সিদ্ধান্তহীনতার ধারাবাহিকতা, ডমিঙ্গোর বিদায়ের পরও বিসিবি একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে, বারমুডার অনামী ক্রিকেটার ডেভিড হেম্পকে হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নিয়োগ শুরু থেকেই সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর তাকে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া বিসিবির সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতাকেই প্রমাণ করে।

একইভাবে, নিক পোথাসকে মাত্র এক সিরিজের জন্য ব্যাটিং কোচ হিসেবে আনা হলেও পরে তাকে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তগুলোর ফলে দলের ভেতর নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট।

 

খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা: জাতীয় দল পরিচালনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে ক্রিকেটারদের জায়গা মতো ব্যবহার না করার নজিরও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টি-টোয়েন্টির মতো দ্রুতগতির ফরম্যাটে সাইফ হাসানের মতো টেস্ট-ধাঁচের ব্যাটসম্যানকে খেলানো কিংবা নাঈম শেখকে সাদা পোশাকে নামানোর মতো ঘটনা বোর্ডের সিদ্ধান্তহীনতাকে সামনে আনে।

 

এমন সিদ্ধান্তগুলো কেবল ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে না, বরং দলের সামগ্রিক ভারসাম্যও নষ্ট করে।

স্থায়ী পরিকল্পনার অভাব ও জোড়াতালির সংস্কৃতি, ডেভিড হেম্পকে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে। বর্তমানে ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। এটা আরও একবার প্রমাণ করে যে বিসিবি দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

 

এদিকে বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার ৯০ দিন পার করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। জাতীয় দল, বয়সভিত্তিক দল, গ্রাউন্ডস ব্যবস্থাপনা, লিগ ও টুর্নামেন্ট পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভাব প্রকট। আপাতত এসব বিভাগের দায়িত্ব কে পালন করছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। ভাসা ভাসা পরিস্থিতিতে বোর্ড পরিচালনা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ, এমন অব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়ন থমকে গেছে। আফগানিস্তানের ক্রিকেটও তালেবান সরকারের অধীনে এমন শৃঙ্খলাহীন অবস্থার মুখোমুখি হয়নি। অথচ বাংলাদেশের মতো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে স্থায়ী পরিকল্পনা এবং সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার অভাব কেন?

 

ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে গোষ্ঠীগত স্বার্থ থেকে বের হয়ে এসে সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দলের জন্য উপযুক্ত কোচিং স্টাফ নিয়োগ, খেলোয়াড়দের সঠিক ব্যবস্থাপনা, এবং বোর্ডের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

জোড়াতালির এই সংস্কৃতি চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দুর্বল হবে, যা ক্রিকেটপ্রেমী জাতির জন্য হতাশাজনক। এখনই সময় বিসিবিকে সঠিক পথে হাঁটার, নইলে ভবিষ্যতে আর উন্নতির আশা করা যাবে না।

 

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর