যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি ফেডারেশনকে বাধ্যতামূলকভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন এবং অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল (১৭ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “প্রতিটি ফেডারেশনকে বার্ষিক প্রতিবেদন ও অডিট রিপোর্ট দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। কেউ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তা তদন্তের আওতায় আসবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন যে, বেশ কয়েকটি ফেডারেশন স্বায়ত্তশাসিত, যা তাদের পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপের সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। তবে সরকার স্বায়ত্তশাসিত ফেডারেশনগুলোকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি দমন ও কার্যকর প্রশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়েছে। ক্রীড়া খাতসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম পুনর্গঠন প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ফেডারেশনের কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেই সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে। এতে করে ক্রীড়া খাতের স্থবিরতা কাটিয়ে কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), যা দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া ফেডারেশন, সেখানেও নতুন পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে চলমান অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্রীড়া উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও স্থায়িত্বের লক্ষ্য কাজ করে যাচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাস করে, ক্রীড়া খাতের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য প্রতিটি ফেডারেশনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষ পরিচালনা অপরিহার্য।
এই উদ্যোগে ক্রীড়া মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি ক্রীড়া খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে কিছু সমালোচক আশঙ্কা করছেন, প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের আড়াল করার প্রবণতা নতুন নেতৃত্বেও থাকতে পারে।
ক্রীড়া উন্নয়নে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সেগুলো দ্রুত তদন্ত করা হবে। কোনো ফেডারেশন বা ব্যক্তিকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে তাকে ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগ দেশের ক্রীড়া খাতকে স্থায়ী উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার ওপর। ক্রীড়া অঙ্গনে এই নতুন পদক্ষেপ আশার আলো জাগালেও এর ফলাফল দেখার জন্য সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: