বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আর আমাদের মাঝে নেই। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগে অবশেষে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার কিছু পরে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আর আমাদের মাঝে নেই। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগে অবশেষে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার কিছু পরে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
অসুস্থতার দীর্ঘ লড়াই
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সতীর্থ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। তিনি জানান, পিন্টু দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে রবিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
জন্ম ও ফুটবল জীবনের শুরু
১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁ জেলার সান্তাহারে জন্মগ্রহণ করেন জাকারিয়া পিন্টু। ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে মাত্র পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকেই ক্রীড়াঙ্গনে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মাঠ মাতিয়েছেন। ক্লাবটির হয়ে খেলার পাশাপাশি কোচের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাকারিয়া পিন্টু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করেন। দলটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিল, যার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে প্রদান করা হয়েছিল। তার এই অবদান শুধু ফুটবলে নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
খেলোয়াড়ি জীবন ও পরবর্তী অবদান
পিন্টুর খেলোয়াড়ি জীবন শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক এবং প্রশিক্ষক। মোহামেডানের হয়ে অসংখ্য শিরোপা জয়ের পাশাপাশি তিনি পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তার নেতৃত্ব, মাঠে-বাইরে শৃঙ্খলা এবং খেলায় নিবেদন তাকে বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।
ক্রীড়াঙ্গনের শোক
তার মৃত্যুতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বাফুফের সভাপতি তাবিথ আওয়াল বলে “পিন্টু ভাই কেবল একজন ফুটবলার নন, তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ। তার অবদান কখনও ভোলার নয়।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তার জানাজা আগামীকাল সকাল ১০টায় মোহামেডান ক্লাব প্রঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে।
এক কিংবদন্তির বিদায়
জাকারিয়া পিন্টু কেবল একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের ক্রীড়া ও স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অনন্য পুরোধা। তার মৃত্যুতে দেশের ক্রীড়াঙ্গন একজন সত্যিকারের কিংবদন্তিকে হারাল। তাকে স্মরণ করে বলা যায়, "নক্ষত্রেরা ঝরে পড়ে, কিন্তু তাদের আলোকছটা থেকে যায় চিরদিন।" জাকারিয়া পিন্টু তার কাজের মাধ্যমে সেই চিরস্থায়ী আলোকছটা আমাদের জন্য রেখে গেছেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: