[email protected] রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মহানবীর (সা.) সর্বশেষ স্ত্রী ছিলেন যিনি

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ৯:০৬ এএম

হজরত মাইমুনা (রা.): নবীজির (সা.) শেষ স্ত্রী ও এক আলোকোজ্জ্বল জীবন

হজরত মাইমুনা বিনতে হারিস (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহর (সা.) সর্বশেষ স্ত্রী। তার বংশপরিচয়, চরিত্র ও নবীজির ঘরোয়া জীবনে তার অবদান আজও মুসলিম সমাজকে অনুপ্রাণিত করে।

জন্ম ও বংশপরিচয়

প্রায় ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি হারিস আল-হিলালিয়া ও হিন্দ বিনতে আউফের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয় ‘বাররা’। পরে নবী করিম (সা.) নিজ হাতে তার নাম বদলে ‘মাইমুনা’ রাখেন, যার অর্থ— বরকতপূর্ণ।

তার পরিবার কুরাইশ ও নবীজির শাখা-পরিবারের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল।

তার বোন উম্মুল ফাজল লুবারা ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মা।

আরেক বোন সালমা ছিলেন নবীজির চাচা হামজার (রা.) স্ত্রী।

তিনি ছিলেন নবীজির স্ত্রী জয়নব বিনতে খুজাইমার সৎবোনও।


শাওয়াল মাসের বরকতময় বিবাহ

মাইমুনা (রা.) নিজেই নবীজির (সা.) সঙ্গে বিবাহের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। এ ইচ্ছা তিনি তার বোন উম্মুল ফাজলকে জানান। পরবর্তীতে উম্মুল ফাজলের স্বামী আব্বাস (রা.) বিষয়টি নবীজির কাছে তুলে ধরেন এবং নবীজিও প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।

হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে, ৭ হিজরির শাওয়াল মাসে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। তখন নবীজির বয়স ছিল ৬০ বছর এবং মাইমুনা (রা.)-এর বয়স ছিল ৩৬। এই সময় মুসলমানেরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওমরাহ আদায়ের জন্য মক্কায় প্রবেশ করতে সক্ষম হন।

স্বল্প কিন্তু স্মরণীয় সহযাত্রা

বিয়ের পর মাত্র তিন বছর নবীজির (সা.) সঙ্গে সংসার করার সুযোগ হয়েছিল মাইমুনা (রা.)-এর। নবীজির ইন্তেকালের পরে তিনি দীর্ঘ চার দশক জীবিত ছিলেন।

তিনি ছিলেন—

বিনয়ী

আত্মীয়তার বন্ধনে যত্নবান

দরদী ও ধর্মপ্রাণ


অনেক গবেষকের মতে, নবীজির শেষ অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ তার ঘরেই দেখা দিয়েছিল। পরে স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে নবীজিকে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি ছিলেন জ্ঞানী নারী এবং প্রায় ১৩টি হাদিস বর্ণনা করেন, যা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমেও সংরক্ষিত আছে।

ইন্তেকাল ও শেষ ইচ্ছা

৫১ হিজরিতে ৮০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি وصিয়ত করেছিলেন যে, নবীজির সঙ্গে যেখানে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল— সরাফ নামক সেই স্থানেই যেন তাকে দাফন করা হয়। তার এই ইচ্ছা যথাযথভাবেই পূরণ করা হয়।

আলেমদের মতে, মাইমুনা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহের পরই কোরআনে এমন আয়াত নাজিল হয় যা নবী করিম (সা.)-কে নতুন করে আর কোনো স্ত্রী গ্রহণ করতে নিষেধ করে। সেই থেকে নবীজির আর কোনো বিবাহ হয়নি।

উম্মাহর জন্য প্রেরণার উৎস

নবীজির সব স্ত্রীই মুসলিম সমাজে “উম্মাহাতুল মুমিনীন”— অর্থাৎ মুমিনদের মা হিসেবে সম্মানিত। ইসলাম প্রচার, জ্ঞান সংরক্ষণ, এবং নবীজির সেবা— সব ক্ষেত্রেই তারা গভীর দায়িত্ব ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন।

হজরত মাইমুনা (রা.)-এর জীবনও সেই আলোকময় ধারারই অংশ—
তার সরলতা, জ্ঞান, দানশীলতা ও ধর্মনিষ্ঠা চিরকাল মুসলিম উম্মাহর কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর