ইসলামের প্রারম্ভিক যুগ থেকেই নারী সাহাবিরা জ্ঞানচর্চা,
সমাজসেবা ও মানবকল্যাণের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। সেই অগ্রদূতদের অন্যতম ছিলেন শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)—যিনি চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব—এই তিন ক্ষেত্রেই অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
পরিবার ও পরিচয়
শিফা (রা.)-এর প্রকৃত নাম ছিল লাইলা। চিকিৎসায় প্রগাঢ় দক্ষতার কারণে তিনি ‘শিফা’ উপাধি অর্জন করেন। তিনি কুরাইশ বংশের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তার স্বামী ছিলেন আবু হাতমা ইবনে হুযাইফা এবং তাদের সুলায়মান ও মাসরূক নামে দুই সন্তান ছিল। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল।
ইসলামের প্রথম দিকেই তিনি ঈমান গ্রহণ করেন এবং হিজরতের অগ্রগামী সাহাবিদের দলে ছিলেন। মদিনায় তার বাড়ি ছিল মসজিদে নববীর খুব কাছে। নবীজি (সা.) নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হজর তাকে অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান ও সম্মানিত নারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষা বিস্তারে শিফা (রা.)-এর অবদান
জাহেলি যুগে নারীদের মধ্যে সাক্ষরতা ছিল অত্যন্ত কম। সেই সময়েও শিফা (রা.) ছিলেন শিক্ষিত, এবং তিনি অন্য নারীদেরও শিক্ষা দিতেন। তার প্রথম ছাত্রী ছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর কন্যা ও নবীজি (সা.)-এর স্ত্রী হাফসা (রা.)। তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের ফলে হাফসা (রা.) পরবর্তীতে কোরআন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শিফা (রা.) বিশ্বাস করতেন—জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণ উভয়ই মুসলিম সমাজে উত্তম আমল হিসেবে গণ্য হয়। তিনি নবীজির শিক্ষা অনুসরণ করে সাক্ষরতা বিস্তারে উৎসাহিত করতেন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে অগ্রগামী নারী সাহাবি
তৎকালীন আরবে চিকিৎসাজ্ঞান খুব উন্নত ছিল না, কিন্তু শিফা (রা.) ছিলেন দক্ষ চিকিৎসক। নবীজি (সা.) তাকে বিশেষভাবে হাফসা (রা.)-কে ‘নামলা’ রোগের চিকিৎসা শেখাতে বলেছিলেন, যা আজকের ভাষায় ত্বকে ফোস্কা বা র্যাশের মতো সমস্যার সঙ্গে তুলনীয়।
তিনি আল্লাহর নাম পাঠ করে হলুদ ও ভিনেগারের মিশ্রণে একটি পেস্ট প্রস্তুত করতেন, যা ছিল কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বোঝা যায়—নবীজি (সা.) তার চিকিৎসাগত প্রজ্ঞার ওপর কতখানি আস্থা রাখতেন।
প্রশাসনে প্রথম নারী কর্মকর্তা
শিফা (রা.)-এর বহুমুখী দক্ষতার কারণে খলিফা হজরত ওমর (রা.) মদিনার বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তার হাতে দেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নারী যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্ব পালন করেন। বাজারে প্রতারণা ও অনিয়ম ঠেকাতে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয় এবং তিনি ব্যবসায়ীদের কাছেও বিশেষ সম্মান অর্জন করেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)-এর জীবন প্রমাণ করে—পরিবেশ প্রতিকূল হলেও জ্ঞান, সদিচ্ছা ও দৃঢ় মনোভাব একজন নারীকে সমাজে অসামান্য মর্যাদায় উন্নীত করতে পারে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশাসনে তার অবদান মুসলিম নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: