হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকাল মুসলিম উম্মাহর জন্য ছিল গভীর
শোকের মুহূর্ত—তবু এটিই ছিল ঈমান, ধৈর্য ও প্রজ্ঞার বড় পরীক্ষা। আকস্মিক বেদনায় মানুষ বিমূঢ় হয়ে গেলেও সাহাবিরা কোরআনের শিক্ষায় ও নবীজির দীর্ঘ দিকনির্দেশনায় মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন এই কঠিন বাস্তবতা গ্রহণের জন্য। তাই তারা শোককে পরিণত করেন দায়িত্ববোধ, ঐক্য ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে।
কোরআনের পূর্ব নির্দেশনা
আলেমদের মতে, আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে সাহাবিদের আগে থেকেই সতর্ক ও প্রশিক্ষিত করেন। উহুদের যুদ্ধে নবীজি শহীদ হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়া ছিল সেই শিক্ষার একটি ঘটনা। কোরআনে বলা হয়—
“মুহাম্মদ তো একজন রসুল; তাঁর আগে বহু রসুল অতীত হয়েছেন…” (আলে ইমরান ১৪৪)
ইমাম রাজি ব্যাখ্যা করেন—যেমন পূর্ববর্তী নবীরা ইন্তেকাল করেছেন, তেমনি মুহাম্মদ (সা.)-কেও মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু দ্বীন তাদের মৃত্যুতেও থেমে যায়নি, মুসলমানদের ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য।
মৃত্যুর অনিবার্যতা—কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণা
কোরআনে আরও বলা হয়েছে—
“তুমি অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে।” (যুমার ৩০)
ইবনে আশুর বলেন, এই আয়াত সাহাবিদের মনে প্রতিষ্ঠা করে যে নবীজির জীবনসীমা আছে। তাঁর জীবদ্দশায় যা শেখার তা শিখে নিতে হবে, যেন ইন্তেকালের পর কেউ বিভ্রান্তিতে না পড়ে।
আরেক আয়াতে বলা হয়—
“তোমার আগে কোনো মানুষকেই আমি চিরস্থায়ী করিনি।” (আম্বিয়া ৩৪)
ইমাম রাজি বলেন, কেউ যেন ভুলভাবে মনে না করে যে শেষ নবী হওয়ায় তিনি অমর—এই ভুল ধারণা দূর করতেই আয়াতটি নাজিল হয়।
দ্বীন সম্পূর্ণ, তাই নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়নি
সুরা মায়েদায় ঘোষণা আসে—
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম…” (মায়েদা ৩)
সাহাবিরা বুঝেছিলেন—নবুবত শেষের দিকে এসে গেছে, বিধান সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই নবীজির ইন্তেকালের পরও উম্মাহ দিকহারা হয়নি। হালাল–হারাম ছিল নির্দিষ্ট, আর যেসব বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল—তা কোরআন ও সুন্নাহ থেকেই সহজে導導 করা সম্ভব ছিল।
সাহাবিদের দৃঢ়তা ও ঐক্য
নবীজির ইন্তেকালের দিন ইতিহাসের কঠিনতম সময় হলেও সাহাবিরা স্থির ছিলেন। তারা জানতেন—ইসলাম ব্যক্তিনির্ভর নয়, বরং নীতিনির্ভর। তাই তারা পরামর্শ, শূরা ও ঐক্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।
আবু বকর, ওমর, আলী, আয়েশা (রা.)—সবাই মিলে উম্মাহকে একত্র রাখেন, বিদ্রোহী উপজাতিদের দমন করেন এবং মানুষকে সুন্নাহর মর্মবাণীর দিকে ফিরিয়ে আনেন।
কেন উম্মাহ টিকে থাকতে পেরেছিল
কোরআন সাহাবিদের আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছিল।
দ্বীন ছিল পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত।
নবীজির শিক্ষা ছিল স্পষ্ট, বাস্তবধর্মী ও অনুসরণযোগ্য।
সাহাবিরা ঐক্য, ঈমান ও বিচক্ষণতায় সংকট মোকাবিলা করেছিলেন।
এই কারণেই তারা দ্রুত শোক কাটিয়ে উঠে উম্মাহকে স্থিতিশীল ও সুসংগঠিত করতে সক্ষম হন। তারা সত্যিই প্রমাণ করেছিলেন—তারা মানবজাতির জন্য উদ্ভাসিত উত্তম উম্মাহ।
এসআর
মন্তব্য করুন: