ইসলামী শরিয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো যাকাত।
কোরআন ও হাদিসে অনেক সময় যাকাতকে ‘সদকা’ শব্দ দিয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন— তাদের সম্পদ থেকে তুমি সদকা গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে তারা পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জন করবে। আর তাদের জন্য দোয়া করো; তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তির কারণ হবে। আল্লাহ সব শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ। (সুরা আত-তাওবা : ১০৩)
আরেক স্থানে বলা হয়েছে, কেউ কেউ সদকার বিষয়ে তোমাকে অভিযুক্ত করে। তাদেরকে যদি দেওয়া হয়, তারা খুশি থাকে; কিন্তু না পেলে তারা অসন্তুষ্ট হয়। (সুরা আত-তাওবা : ৫৮)
আল্লাহ আরও বলেছেন, সদকা মূলত গরিব, অভাবী এবং যেসব শ্রেণিকে কোরআন নির্ধারণ করেছে—তাদের অধিকার। (সুরা আত-তাওবা : ৬০)
হাদিসে ‘যাকাত’ ও ‘সদকা’
রাসুলুল্লাহ (সা.) যাকাত সম্পর্কেও ‘সদকা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এক হাদিসে এসেছে—পাঁচ ওসুকের কম ফসলে, পাঁচ উটের নিচে উটে এবং পাঁচ উকিয়ার কম রূপায় সদকা (যাকাত) নেই। (বুখারি, মুসলিম)
সাহাবি মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.)–কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় নবীজি (সা.) বলেছিলেন—তুমি তাদের জানিয়ে দিও, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সদকা (যাকাত) ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে নিয়ে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এ কারণে সে সময় যাকাত সংগ্রাহককে বলা হতো ‘মুসাদ্দিক’—অর্থাৎ সদকা গ্রহণকারী।
পরবর্তী যুগে ‘সদকা’ শব্দটি সাধারণত স্বেচ্ছা দান বা নফল দান বোঝাতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কিন্তু কোরআন নাজিলের সময়ে এ শব্দের অর্থ ছিল আরও ব্যাপক ও গভীর।
‘সদকা’ শব্দের মূল ধারণা
‘সদকা’ এসেছে ‘সিদক’ (সত্যতা) মূল ধাতু থেকে। আলেম আবু বকর ইবনুল আরাবির মতে, যেহেতু যাকাত মুমিনের ঈমানের সত্যতা প্রকাশ করে, তাই তাকে সদকা বলা হয়।
‘সিদক’ বলতে বোঝায়—বিশ্বাসকে কাজে পরিণত করা। যেমন নারীর ‘সাদাক’ বা মোহর বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কের সত্যতা প্রমাণ করে। আর ‘তাসাদ্দাক’ অর্থ নিজের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করা—অর্থাৎ ঈমানের বাস্তব প্রকাশ।
আল-বিজাওয়ির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—সদকা এমন দান, যা মুমিনের ঈমান, আন্তরিকতা ও আখিরাতে বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায়।
দান—ঈমানের বাস্তব প্রমাণ
কোরআন দানকে ঈমানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। আল্লাহ বলেন—যে দান করে, তাকওয়া অবলম্বন করে এবং উত্তম পরিণামে বিশ্বাস রাখে—আমি তার জন্য সহজ করে দেব কল্যাণের পথ। আর যে কৃপণতা করে, নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে এবং পরিণাম অস্বীকার করে—তার জন্য সহজ হবে সংকটের পথ। (সুরা আল-লাইল : ৫–১০)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও বলেছেন, সদকা হলো প্রমাণ। (মুসলিম)
সুতরাং যাকাতকে ‘সদকা’ বলা হয় এজন্য যে এটি শুধু অর্থব্যয়ের ইবাদত নয়—এটি মুমিনের সত্যবাদিতা, ঈমান এবং আল্লাহভীতির দৃশ্যমান প্রকাশ।
এসআর
মন্তব্য করুন: