ইসলামের মূল ভিত্তিগুলোর একটি হলো দয়া। ‘ইসলাম’ শব্দটি এসেছে
‘সালাম’ ধাতু থেকে, যার অর্থ শান্তি। এই শান্তিই ইসলামের প্রাণ। শান্তির শিক্ষা দিয়ে ইসলাম মানুষকে মর্যাদা, ন্যায়, সহনশীলতা ও ভালোবাসার জীবন গড়ে তুলতে শেখায়। এসব গুণের কেন্দ্রবিন্দু হলো রহমত বা দয়া।
কোরআনের দৃষ্টিতে দয়া
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আমি তাদের কাছে এমন কিতাব প্রেরণ করেছি, যা জ্ঞানের ভিত্তিতে বিস্তারিত বর্ণিত। এটি হিদায়াত ও রহমত তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে।”
— সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ৫২
আরও বলা হয়েছে—
“আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ।”
— সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭
নবী করিম (সা.) ছিলেন দয়ার প্রতীক
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) পরিবার, এতিম, বন্ধু-বান্ধব, অপরিচিত এমনকি শত্রুদের প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতেন। প্রাণী ও পরিবেশের প্রতিও তার আচরণ ছিল দয়া ও সহানুভূতিতে ভরা। তিনি বলেছেন, প্রাণীরাও আল্লাহর সৃষ্টি; তাই তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা ও অভিভাবক—এই দায়িত্বের অংশ হিসেবেই প্রাণীর প্রতি সদয় থাকা জরুরি।
হাদিসে প্রাণীর প্রতি দয়ার শিক্ষা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সেই চড়ুই আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে, ‘হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে বিনা কারণে হত্যা করেছে।’”
— (নাসাঈ, হাদিস: ৪৪৪৭)
আরও একটি হাদিসে বলা হয়েছে—
“যে কেউ কোনো প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে বিচার করবেন।”
— (নাসাঈ)
নবী করিম (সা.) প্রাণীর অঙ্গ কর্তন, শরীরের নরম স্থানে দাগ দেওয়া বা অপ্রয়োজনে ভার বহনে বাধ্য করা নিষিদ্ধ করেছেন। কোনো প্রাণীকে কষ্ট পেতে দেখলে তিনি বলতেন, “প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।”
— (আবু দাউদ)
মানসিক কষ্ট থেকেও বিরত থাকা
নবী করিম (সা.) শুধু শারীরিক নয়, প্রাণীর মানসিক কষ্টকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। এক সাহাবি বর্ণনা করেন, “আমরা এক সফরে এক পাখির ছানা ধরেছিলাম। মা পাখিটি কষ্টে ডানা ঝাপটাচ্ছিল। নবী করিম (সা.) এসে বললেন, ‘কে এই পাখিটিকে কষ্ট দিয়েছে? তার ছানাগুলো ফিরিয়ে দাও।’”
— (আবু দাউদ)
প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান
জাহেলি যুগে প্রাণীদের ওপর অত্যাচার প্রচলিত ছিল। ইসলাম এসব নিষ্ঠুরতা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। নবী করিম (সা.) বলেন—
“যে জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে কিছু কেটে নেওয়া হয়, তা মৃত প্রাণীর মতোই অপবিত্র।”
— (তিরমিজি)
জবাইয়ের সময় সহানুভূতির নির্দেশ
তিনি বলেছেন—
“আল্লাহ সব কাজে উৎকর্ষ নির্ধারণ করেছেন। যখন জবাই করবে, সুন্দরভাবে করো; ছুরি ধারালো করো এবং প্রাণীকে স্বস্তি দাও।”
— (মুসলিম)
মানুষের দায়িত্ব
মানুষকে আল্লাহ প্রাণীদের অভিভাবক করেছেন। তাদের খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা মানুষের দায়িত্ব। কোনো প্রাণীকে অনাহারে রাখা, নির্যাতন করা বা অতিরিক্ত পরিশ্রমে বাধ্য করা আল্লাহর কাছে কঠিন অপরাধ। কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী, প্রাণীদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করা প্রতিটি মুমিনের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।
এসআর
মন্তব্য করুন: