[email protected] মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
২০ কার্তিক ১৪৩২

নিজের পাগড়িতে নবীজির (সা.) চুল সংরক্ষণ করেছিলেন যে সাহাবি

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ৮:০৯ এএম

বিখ্যাত সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সম্পর্কে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে— তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাথার চুলের কিছু অংশ নিজের পাগড়িতে সংরক্ষণ করেছিলেন। এক যুদ্ধে সেই পাগড়িটি হারিয়ে গেলে তিনি সেটি খুঁজে বের করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পরে কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটি কোনো সাধারণ পাগড়ি নয়; এতে রয়েছে নবীজি (সা.)-এর বরকতময় চুল।

ইমাম ইবন কাসির তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-তে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়—

ইয়ারমুকের যুদ্ধে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর পাগড়ি পড়ে গেলে তিনি সৈন্যদের সেটি খুঁজে আনার নির্দেশ দেন। কেউ যখন এ ঝুঁকির কারণ জানতে চান, তিনি বলেন, “এই পাগড়ির ভেতর রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার সামনের দিকের কিছু চুল। আমি যখনই এটি সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছি, আল্লাহ আমাকে বিজয় দান করেছেন।”

তবে ইবন কাসির ঘটনাটি উল্লেখ করলেও এর সনদ (সূত্র) দেননি। এটি একমাত্র বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবন উমর আল-ওয়াকিদি, যিনি হাদিসবিদদের মতে দুর্বল ও অবিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। ইমাম আহমদসহ অনেকে তাকে ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ বলে মত দিয়েছেন। ওয়াকিদি তার ফুতূহুশ শাম গ্রন্থে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেন।

ওয়াকিদির বর্ণনা অনুযায়ী—
যুদ্ধের সময় খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর পাগড়ি পড়ে গেলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, “আমার পাগড়ি! আমার পাগড়ি!” পরে এক আত্মীয় সেটি উদ্ধার করে আনেন। তখন তিনি জানান, “বিদায় হজের সময় নবীজি (সা.) যখন মাথা মুড়াচ্ছিলেন, আমি তাঁর কিছু চুল নিয়েছিলাম। নবীজি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘খালিদ, এগুলো কী করবে?’ আমি বলেছিলাম, ‘এর বরকত সঙ্গে নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ব।’ তখন নবীজি বলেন, ‘যতদিন এগুলো তোমার সঙ্গে থাকবে, ততদিন তুমি বিজয়ী হবে।’ তাই আমি সেগুলো পাগড়ির সামনের দিকে রেখে দিয়েছি।”

হাদিস নাকি আছার?

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটি কোনো হাদিস নয় বরং আছার—অর্থাৎ সাহাবি বা তাবেঈদের উক্তি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বর্ণনা। হাদিস কেবল নবীজি (সা.)-এর বাণী, কাজ বা অনুমোদনের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু আছার-এ সাহাবিদের কাজও অন্তর্ভুক্ত থাকে।

নবীজির নিদর্শন থেকে বরকত নেওয়ার অনুমতি

সহিহ হাদিসে প্রমাণিত যে সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর নিদর্শন থেকে বরকত নিতেন। যেমন—

  • আবু জুহাইফা (রা.) বলেন, নবীজির অজুর পর অবশিষ্ট পানি মানুষ নিজেদের গায়ে মাখতেন।
  • আবু মুসা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি তাঁর হাত-মুখ ধুয়ে সেই পানি তাদের পান করতে ও গায়ে লাগাতে বলেন। (সহিহ বুখারি)
  • খায়বারের যুদ্ধে নবীজি হজরত আলী (রা.)-এর চোখে থুথু দিয়ে দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তা ভালো হয়ে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)
  • আনাস (রা.) বলেন, নবীজি একবার তাঁদের ঘরে বিশ্রাম নিলে তাঁর ঘাম সংগ্রহ করে উম্মু সুলায়ম তা সুগন্ধিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতেন। (মুসলিম)

অতএব, সাহাবিদের জন্য নবীজির দেহাবশেষ ও ব্যবহার্য বস্তু থেকে বরকত নেওয়া বৈধ ছিল। তবে নবীজি (সা.) ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির দেহাবশেষ বা নিদর্শন থেকে বরকত নেওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয় না।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর