[email protected] সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

ভুটান ম্যাচে অব্যবস্থাপনার পর বদলে যাওয়া চিত্র: নোওমীর দক্ষতায় প্রশংসন, সাদমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

“নোওমী যেন প্রয়াত অমিতের ছায়া।”

এম. এ. রনী

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২৫ ৯:৪২ পিএম
আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ১১:৩২ এএম

ভুটান ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে পুরো ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ব্যবস্থাপনায় ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। মিডিয়া কর্মীদের বসার উপযুক্ত স্থান না থাকা, কোনো রকম দিকনির্দেশনার অভাব, এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিবের কার্যত অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সাংবাদিকদের বসতে হয়েছিল মেঝেতে, ক্যামেরাম্যানদের সঙ্গে করা হয় অপেশাদার আচরণ, যা সংবাদকর্মীদের জন্য ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপমানজনক অভিজ্ঞতা। এসব ঘটনায় বাফুফের ওপর সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ক্রীড়া মহলে।

তবে এসব ভূলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাফুফে সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে ফেলে। প্রয়াত মিডিয়া ম্যানেজার অমিতের হাতে গড়া মিডিয়া ইউনিটের অন্যতম অভিজ্ঞ সদস্য নোওমী নোমান দায়িত্ব নিয়ে আয়োজনটিকে রূপ দেন একটি পেশাদার ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানে।

ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের জন্য ছিল নির্ধারিত আসন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, সুসংগঠিত কর্মপদ্ধতি এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই নোওমী নোমান নিজ হাতে মিডিয়া কর্মীদের অভ্যর্থনা জানান, কুশল বিনিময় করেন এবং আগের ম্যাচের ত্রুটির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

গত ম্যাচে অনেক পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়া সাংবাদিক ম্যাচ কভার করতে পারলেও পাননি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড—যা একজন পেশাদার সাংবাদিকের মাঠে কাজ করার মৌলিক অধিকার। এবারের সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গও সামনে আসে। এ নিয়ে নোওমী নোমান সরাসরি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সংবাদকর্মীদের বলেন, "আপনারা মাঠে আসেন, কিভাবে ম্যাচ কভার করবেন, সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই—আমি আছি। এটা আমার দায়িত্ব।"

এই বক্তব্য শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং সাংবাদিকদের প্রতি এক ধরনের আস্থার বার্তা—যেখানে একজন মিডিয়া ম্যানেজার তাদের পাশে আছেন এবং তাদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নোওমীর এই আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্ববোধ দেখে অনেকের মুখে উঠে আসে এক মন্তব্য—“নোওমী যেন প্রয়াত বাফুফে মিডিয়া ম্যানেজার অমিত এর ছায়া।” দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনের মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি যে সম্পর্ক, শ্রদ্ধা ও আস্থার বন্ধন গড়ে তুলেছেন, তা তাকে করে তুলেছে এই অঙ্গনের একজন প্রিয় ও আস্থাভাজন মুখ।

বলা চলে, অমিতের হাত ধরে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা, সততা ও নিবেদনের মধ্য দিয়ে নোওমী নোমান গড়ে তুলেছেন এক পেশাদার সত্তা, যার মধ্যে মিডিয়া কর্মীরা খুঁজে পান বন্ধুর মতো সহানুভূতি, আবার প্রয়োজনে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক। মিডিয়া কর্মীদের কোনো দাবি-দাওয়া তিনি যথাসম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করেন, আর সম্ভব না হলে সেটা ব্যাখ্যা করেন হাসিমুখে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে—যা একজন সত্যিকারের মিডিয়া ম্যানেজারের গুণ।

এর বিপরীতে সাদমান সাকিবের ভূমিকা বরং হতাশাজনক। একজন সময়ের পরীক্ষিত সংবাদকর্মী হয়েও মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ভুটান ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং সাংবাদিকদের প্রতি অমার্জিত ও বিরক্তিকর মনোভাব মিডিয়া অঙ্গনে নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এখানে প্রশ্ন উঠে আসে—একজন দক্ষ সংবাদকর্মী কি স্বাভাবিকভাবেই একজন ভালো মিডিয়া ম্যানেজার হবেন? সাদমান সাকিবের ভূমিকা দেখে মনে হয়, পেশাদারিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা এবং মানুষের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষমতা না থাকলে সাংবাদিক হিসেবে অভিজ্ঞতাও মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগে না।

সিঙ্গাপুর ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে সাদমান সাকিব ছিলেন কার্যত আড়ালে, কোনো দৃশ্যমান দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি তাকে। তার এই অনুপস্থিতিই যেন প্রমাণ করে, বাফুফে যখন আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও সহানুভূতিশীল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন বোধ করেছে, তখন তারা নির্ভর করেছে নোওমী নোমানের মতো একজন পরীক্ষিত, দায়িত্বশীল, ও আন্তরিক পেশাজীবীর ওপর।

প্রসঙ্গত, নোওমী নোমান জর্ডানে নারী ফুটবল দলের সফরে থাকায় ভুটান ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে দেশে ফিরে যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি ঘাটতি পূরণ করেছেন, তা মিডিয়া মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা—সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, পেশাদার আচরণ এবং মিডিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো ছাড়া একটি ক্রীড়া ফেডারেশন কখনোই জনসমর্থন ও আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে পারে না। বাফুফে যদি সত্যিই মিডিয়া ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে চায়, তাহলে নোওমী নোমানের মতো কর্মকর্তাদের পাশে থেকে দায়িত্বশীল আচরণকেই সামনে আনতে হবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর