মেসি, নেইমার কিংবা এমবাপের মতো মহাতারকারা এখন ইতিহাস। এবার তারা ছাড়াই নতুন ইতিহাস গড়ল প্যারিস সাঁ জার্মেই। একঝাঁক তরুণ প্রতিভা আর দলগত কৌশলে ভর করে পিএসজি ছুঁয়ে ফেলল ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ শিখর—প্রথমবারের মতো জিতে নিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা।
শনিবার রাতে মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইউরোপের চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নতুন রাজত্বের সূচনা করে লুইস এনরিকের শিষ্যরা। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দীর্ঘ ইতিহাসে এটি ফাইনালে সর্ববৃহৎ ব্যবধানে জয়।
পিএসজির এ ঐতিহাসিক জয়ে নায়ক ১৯ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড দিজিরে দুয়ে, যিনি করেন দুটি গোল। বাকি তিনটি গোল করেন আশরাফ হাকিমি, খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া এবং সেনি।
দুর্দান্ত সূচনা, তাণ্ডবের শেষ: শুরু থেকেই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে পিএসজি। মাত্র ১২ মিনিটে আশরাফ হাকিমির গোলে এগিয়ে যায় দলটি। সাবেক ক্লাব ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গোল করে উদযাপন না করে শ্রদ্ধা জানিয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চান হাকিমি।
২০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিজিরে দুয়ে। সতীর্থের পাস পেয়ে নেওয়া শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার দিমার্কোর পায়ে লেগে দিক বদলে বল জালে জড়ায়।
তৃতীয় গোলটি আসে ৬৩তম মিনিটে, আবারও দুয়ের পা থেকে। ভিতিনিয়ার থ্রু পাস ধরে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ম্যাচের সব উত্তেজনার ইতি টেনে দেন তরুণ তারকা। ৭৩তম মিনিটে কাভারাৎস্খেলিয়া এবং ৮৪তম মিনিটে সেনির গোল পিএসজির জয়োৎসবকে পূর্ণতা দেয়।
দুয়ে, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন। মাত্র ১৯ বছর ৩৬২ দিন বয়সে ফাইনালে গোল করে ইতিহাস গড়েছেন দিজিরে দুয়ে। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করা তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়; তার আগে আছেন প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট ও কার্লোস আলবের্তো।
পরিসংখ্যানও বলছে, একতরফা ম্যাচ। ম্যাচে পিএসজি বলের দখল রেখেছে প্রায় ৬০ শতাংশ সময়। তারা নিয়েছে ২৩টি শট, যার মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। ইন্টার মিলানের মাত্র ৮ শটের ২টি ছিল লক্ষ্যে, কিন্তু তাতেও ছিল না কোনো কার্যকর চ্যালেঞ্জ।
ইতিহাসগড়া এক মৌসুমে পিএসজি। প্রথম পাঁচ রাউন্ডে মাত্র এক ম্যাচে জিতে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া পিএসজি যেন পুরোদস্তুর রূপকথা লিখল। এরপর প্লে-অফে জায়গা করে নিয়ে ব্রেস্তকে দুই লেগে ১০-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়। এরপর একে একে হারায় লিভারপুল, অ্যাস্টন ভিলা এবং আর্সেনাল—সবশেষে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন।
এই মৌসুমেই তারা জিতেছে লিগ আঁ, ফরাসি কাপ, ফরাসি সুপার কাপ, আর এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ—অর্থাৎ এক মৌসুমে চারটি শিরোপা!
এনরিকের পিএসজি: কৌশল আর নিষ্ঠায় গড়া সাফল্য। ২০১৫ সালে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো লুইস এনরিক এবার পিএসজিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। এই ফাইনালের একাদশে তিনজন টিনএজার খেলোয়াড়ের উপস্থিতি, তরুণদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, পরিকল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়ন—সব মিলিয়ে ফুটবল ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে এই পিএসজি।
এসআর
মন্তব্য করুন: