প্রবাসী ফুটবলারে ভর করে এশিয়ান ফুটবলে জেগে ওঠার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। এশিয়ান ফুটবলের মান গত এক দশকে প্রায় জ্যামিতিক হারে উন্নতি করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির দেশগুলো তাদের গ্রাসরুট নিয়ে কাজ তো চালু রেখেছেই, সেই সাথে মূলত প্রবাসী ও ন্যাচারালাইজড ফুটবলারে সওয়ার হয়ে তুমুল লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
চতুর্থ সারির একাধিক দেশ গ্রাসরুটের পাশাপাশি প্রবাসী ও ন্যাচারালাইজড এ চড়ে এখন তৃতীয় এমনকি দ্বিতীয় সারির ফুটবল শক্তিতেও পৌছে গেছে। আফগানিস্তান, কিরগিজিস্তান, ফিলিপাইন এদের ভেতর উল্লেখযোগ্য নাম। হংকং তো আরও আগে থেকে। এছাড়া এখন শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, চাইনিজ তাইপে ভালোভাবেই এই পথে নেমেছে। আমরা গ্রাসরুটের কাঠামো ও উন্নতি নিয়ে দীর্ঘ দিন কথা বলেও সেভাবে সাড়া পাইনি। নেপাল ও ভূটানের মত দলগুলো, যারা সেভাবে প্রবাসী খুজে পায় না, তাদের বিপক্ষে আজও জোর দিয়ে বলতে পারি না যে তাদের হারাতে পারবো।
ভূটানের বিপক্ষে ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দল ও ক্লাব লেভেলে দুই বার করে হেরেছি আমরা। হেরেছি ২০১৯ এসএ গেমসের ম্যাচটিতেও। যেখানে অ১৭ ও অ২০ এশিয়া কাপেই কোয়ালিফাই করতে পারছি না আমরা দুই দশক পেরিয়ে গেলো, সেখানে সিনিয়র এশিয়া কাপের কথা তো মুখেই আনা যায় না। ওদিকে অ২৩ এশিয়া কাপ বাছাই এর রেকর্ড দেখলে তো চুনকালি লাগবে মুখে। এমতাবস্থায়, প্রবাসী ও ন্যাচারালাইজডদের ওপরই ভরসা করতে হবে আমাদের, বিশেষত প্রবাসীদের নিয়ে।
সৌভাগ্যজনক ব্যাপার, দেরিতে হলেও প্রবাসীদের নিয়ে বাফুফের কার্যক্রম বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে এখন নিয়মিত হয়েছে। অ১৭ জাতীয় দলে অস্ট্রেলিয়ান টপ টায়ার ক্লাবের অ১৮ দলে খেলা ফরোয়ার্ড আরহাম ইসলাম খেলে গিয়েছে। একই যুব দলের সেন্টার ব্যাক/সেন্টার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মাহাদ আমানেরও আসার কথা ছিল তবে পাসপোর্ট জটিলতায় আসা হয়নি।
আমরা আশা করি তাকে আমাদের অ২০ দলে পাওয়া যাবে। শুধু তাই না, নিকট ভবিষ্যতে সেন্টার অফ দ্য ডিফেন্সে আমরা তারিক-আমান জুটিও হয়তো দেখতে পারি। অ২৩ দলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে খেলা ফরোয়ার্ড জায়ান আহমেদ কে ট্রায়ালের আমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছে বাফুফে৷ গুঞ্জন শোনা গেছে, ইংলিশ ৫ম টায়ার ক্লাবের যুব দলে খেলা ফরোয়ার্ড আরিয়ান আমিরও অ২৩ দলে ট্রায়াল অফার পেয়েছে। সিনিয়র দলের দিকে যদি নজর ফেরাই, এক হামজা চৌধুরীর আগমন একাধিক প্রবাসীর মনোযোগ আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।
কানাডা প্রিমিয়ার লীগের সামিত সোমের আসা নিয়ে এখন জোর গুঞ্জন চলছে। ফুলহাম অ২১ দলে খেলা ফরোয়ার্ড ফারহান আলী ওয়ালিদের মত প্রোফাইলের খেলোয়াড়েরা এখন ৭-৮ বছরের বদলে ৩-৪ বছরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবার ব্যাপারে।
হামজার পর ফারহান প্রিমিয়ার লীগে বাংলাদেশি পতাকা উড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ হামজার মতই বা তার চেয়েও সে ভালো করতে পারে সেখানে। সুলিভান ব্রাদার্সদের নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। মিডফিল্ডার কুইন সুলিভানের বয়স ২০ এবং তার হয়তো আরও ২-৩ বছর সময় লাগবে সিদ্ধান্তে আসতে৷ ফরোয়ার্ড রোনান সুলিভান ও উইং ব্যাক ডেকলান সুলিভানের ভালো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের হয়ে খেলার। উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস নেক্সট লীগে খেলে যাকে তুলনা করা যায় আমাদের পাইওনিয়র লীগের সাথে। তাদের অ২০ জাতীয় দলের ট্রায়ালে আনা উচিত। তাদের ছোটজন, কাভান কে নিয়ে আপাতত কথা না বলাই ভালো।জার্মানির মত ফুটবল শক্তিও নজর রাখছে ম্যানসিটি এর সাথে চুক্তি করা এই ফরোয়ার্ড এর ওপর।
কুইন ও কাভানের বর্তমান ক্লাবের অ১৮ দলে খেলছে ফরোয়ার্ড নিহান হাসান। সেও খুবই সম্ভাবনাময় নাম আমাদের জন্য। ইউরোপের দিকে নজর দিলে আরও বেশ কিছু প্রবাসীর নাম চলে আসে৷ ফাহমিদুল ইসলাম (ফরোয়ার্ড, ইতালিয়ান সিরি-ডি) এর সাথে বাফুফে যোগাযোগ করেছে বলে জোর গুঞ্জন আছে।
জ্যাক ডুরান্ট (ডিফেন্ডার, নিউক্যাসল অ১৮), ইউসুফ আহমেদ (ফরোয়ার্ড, বারমিংহাম সিটি অ১৮), তানিল শালিক (মিডফিল্ডার, স্টিভেনেজ অ১৮), ক্যামেরন আলী (ডিফেন্ডার, হ্যালিফেক্স অ১৮), জয় উদ্দিন (হেভার ফোর্ড অয়েস্ট অ১৯), নিলয় ভন ডার প্লয়েগ (ইমেন অ২১) ইত্যাদি আরও কিছু নাম নিয়ে সমর্থকদের ভেতর সব সময় আলোচনা চলে।
কাতার ২য় টায়ার থেকে ফরোয়ার্ড ওবায়দুর রহমান নবাব, জাপান টপ টায়ার ক্লাব থেকে নিচের লীগগুলোতে লোনে খেলতে থাকা মিডফিল্ডার রিকুতো হাশিম খুবই সম্ভাবনাময়। নবাবের প্রথম প্রচেষ্টা সফল হয়নি নানাবিধ কারণে এবং ইঞ্জুরি একটা ইস্যু ছিল। অপর দিকে হাশিমের সাথে যোগাযোগ শুরু করা উচিত বাফুফের৷
কাতার টপ টায়ারে খেলা ডিফেন্ডার নাবিল ইরফানের পরবর্তী ২-৩ বছরের দিকে নজর রাখতে হবে। আপাতত হামজা ও সামিতের সাথে আমরা ভালো একজন স্কোরিং ফরোয়ার্ড যোগ করতে পারলে এশিয়া কাপে কোয়ালিফাই করা নিয়ে আশাবাদী হতে পারবো। ধাপে ধাপে অন্যান্য অনেকেই যোগ দিবে বলে আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে এবার না হোক, ২০৩১ সালের এশিয়া কাপ নিয়ে দারুণ আশাবাদী হওয়া যাবে৷ বাফুফেরও সেভাবে পরিকল্পনা করে আগানো উচিত।
এসআর
মন্তব্য করুন: