ইসলামে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও নির্ভর করাকে তাওয়াক্কুল বলা
হয়। আরবি এই শব্দের অর্থ হলো—নিজের কার্যাবলি সম্পূর্ণভাবে একটি অভিভাবকের হাতে অর্পণ করা। আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর একটি আল-ওয়াকীল, অর্থাৎ যিনি সবকিছুর দেখভাল ও ব্যবস্থা করেন। কোরআনে এই নামে আল্লাহকে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ কোরআনে নির্দেশ করেছেন—তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের প্রতিপালক, এবং তিনিই একমাত্র উপাস্য। তাকেই অভিভাবক ও কর্মসাধনকারী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে (সুরা মুজ্জাম্মিল, ৯)। আবার হজরত মুসা (আ.)-কে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে—আল্লাহ ছাড়া কাউকে অভিভাবক নিও না (সুরা বনী ইসরাইল, ২)।
এগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ঈমান ও একত্ববাদের মৌলিক অংশ।
১. যথাযথ চেষ্টা করা
অনেকেই ভুল মনে করেন যে কিছু না করেও শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করলেই সব সমস্যা দূর হয়ে যায়। কিন্তু তাওয়াক্কুল মানে চেষ্টা পরিত্যাগ করা নয়; বরং চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর নির্ভর করা।
রিজিকের জন্য পরিশ্রম করা, চাকরির জন্য চেষ্টা করা, বা শিক্ষা গ্রহণ করা—এসবই ইসলামের অংশ। মানুষ পরিশ্রম করলে আল্লাহ তার ফল দেন—এটাই আল্লাহর নিয়ম।
এক হাদিসে এক বেদুইনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, তিনি উট না বেঁধে শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছিলেন—উটটি আগে বেঁধে নাও, তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো (তিরমিজি)। অর্থাৎ চেষ্টা ও ভরসা—দুটিই প্রয়োজন।
২. অহংকার পরিহার
আল্লাহ আপনাকে যে ক্ষমতা, জ্ঞান বা সুযোগ দিয়েছেন—তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে; কিন্তু কখনো গর্ব করা যাবে না। কারণ সফলতার নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে নয়; বরং পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
তাই অর্জন যত বড়ই হোক, অহংকার থেকে বিরত থাকা তাওয়াক্কুলের অংশ।
৩. আল্লাহর ফয়সালায় সম্মত হওয়া
মানুষ চেষ্টা করবে, পরিকল্পনা করবে—কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলের মালিক আল্লাহ। তিনি তার প্রজ্ঞা অনুযায়ী কারোর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
ভাগ্য ও তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখা ঈমানের ছয়টি মূল স্তম্ভের একটি। ফলে যা ঘটে তা আল্লাহর সিদ্ধান্ত—এই বিশ্বাস মানুষের অন্তরে শান্তি আনে এবং হতাশা কমায়।
৪. প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ
কোরআনে হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর ঘটনার বর্ণনায় দেখা যায়, তিনি সন্তানদের মিসরে পাঠানোর সময় তাদের সাবধান থাকতে বলেন এবং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করার উপদেশ দেন, যাতে নজর ও সন্দেহ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
এ থেকে বোঝা যায়—মানুষকে নিজের দায়িত্বের অংশটুকু পালন করতেই হবে; তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করা উচিত। চেষ্টা ছাড়া শুধু ভরসা বা ভরসা ছাড়া শুধু চেষ্টা—কোনোটাই পূর্ণ তাওয়াক্কুল নয়।
আল্লাহর ওপর ভরসার উপকারিতা
আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানুষের মনকে ভয়, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্ত করে। নিজের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা এবং বাকি ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়া—এটাই তাওয়াক্কুলের সৌন্দর্য।
একজন বুদ্ধিমান মুমিন সফল হলে অহংকার করেন না, ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়েন না; বরং তিনি সব অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: