মৃত্যু এমন বাস্তবতা, যা অস্বীকার করার উপায় নেই—ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে সব মানুষের জন্যই এটি অবধারিত সত্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন— প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে (আলে ইমরান : ১৮৫)। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে— পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই নশ্বর; কেবল মহান রবেরই সত্তা অটুট ও চিরস্থায়ী (আর-রাহমান : ২৬–২৭)। অর্থাৎ, সৃষ্ট জগতের সবাই একদিন মৃত্যুবরণ করবে, কেবল স্থায়ী থাকবেন আল্লাহ।
ফেরেশতারা—আল্লাহর আনুগত্যবান সৃষ্টি
ফেরেশতারা এমন সৃষ্টি, যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং কখনোই তাঁর আদেশ অমান্য করে না (তাহরিম : ৬)। তারা আল্লাহর সন্তান কিংবা তাঁর অংশ—এ ধারণা কোরআন সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে (আম্বিয়া : ২৬)। বরং তারা সম্মানিত বান্দাহ, যাদের মহান মর্যাদা ও দায়িত্ব রয়েছে।
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
ইমানের ছয়টি রুকনের একটি হলো ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস রাখা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৃত্যু, কবর, হিসাব–কিতাব ইত্যাদি আখেরাতঘটিত বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান।
মৃত্যুর ফেরেশতা—মালাকুল মাওত
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস অনুযায়ী, মানুষের রুহ গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ ফেরেশতা রয়েছেন, যাকে মালাকুল মাওত বলা হয়। ইমাম ইবন বত্তা ও ইমাম তাহাওয়ি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন—রুহ কবজের দায়িত্ব তাঁর, এবং আল্লাহ তাঁকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে তিনি একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে রুহ গ্রহণ করতে পারেন।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে সেই ফেরেশতা, যাকে এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে” (সাজদাহ : ১১)
“আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তাদের মৃত্যু ঘটায় এবং তারা এতে অবহেলা করে না” (আন’আম : ৬১)
মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের ভূমিকা
হাদিসে এসেছে—মুমিনের মৃত্যুের মুহূর্তে জান্নাতের সুগন্ধ ও কাফনসহ সাদা চেহারার ফেরেশতারা উপস্থিত হন, তারপর মালাকুল মাওত শান্তভাবে তার রুহ কবজ করেন। বিপরীতভাবে, কাফেরের রুহ গ্রহণের বর্ণনায় কঠোরতা ও কঠিন অবস্থার চিত্র পাওয়া যায় (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)।
এই হাদিসগুলো ইঙ্গিত করে—রুহ কবজের মূল দায়িত্ব মালাকুল মাওতের হলেও, তাঁর সাথে বিভিন্ন কাজে সহকারী ফেরেশতারাও থাকে।
সহকারী ফেরেশতাদের ভূমিকা
ইব্রাহিম নাখায়ী (রহ.) ও পরবর্তীকালের আলেমরা (যেমন ইবনে উসাইমিন) উল্লেখ করেছেন—মালাকুল মাওতের সহকারী ফেরেশতারা মানুষের দেহ থেকে রুহ বের করতে সহায়তা করেন। তারা রুহকে গলার কাছে নিয়ে আসে, এরপর মালাকুল মাওত সেটি কবজ করেন।
সুতরাং আসল উত্তর হলো—
আজরাঈল (আ.) একা নন।
রুহ কবজের মূল দায়িত্ব তাঁর, কিন্তু আল্লাহ তাঁর অধীনে আরও ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন যারা নির্দিষ্ট কাজগুলোতে তাঁকে সহযোগিতা করে।
এসআর
মন্তব্য করুন: