[email protected] বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
৩ পৌষ ১৪৩২

প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটাল নৈতিকতা রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৫ ৫:১৮ পিএম

প্রযুক্তি মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক আশীর্বাদ। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা বৈধ, যদি তা ইসলামী শরিয়তের নীতিমালার মধ্যে থেকে করা হয়।

প্রযুক্তি আল্লাহর এক অনুগ্রহ, যা মানবকল্যাণে ব্যবহারের সুযোগ দেয়। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল মাধ্যম শরিয়তের সীমার মধ্যে ব্যবহার করা বৈধ। এসব প্রযুক্তি দাওয়াহ প্রচার, শিক্ষা, ব্যবসা ও সামাজিক যোগাযোগের মতো কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়।

প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো নেক নিয়ত ও হালাল উদ্দেশ্য নির্ধারণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য।” (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২)

অনলাইনে সত্য প্রচার ও মিথ্যা প্রতিরোধ করা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)

আরেক আয়াতে এসেছে,

“যারা আল্লাহর আয়াত শোনে এবং তা প্রচার করে, তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” (সুরা যুমার, আয়াত: ১৮)

ডিজিটাল গোপনীয়তা রক্ষা করাও শরিয়তের বিধান। অনুমতি ছাড়া কারও ছবি, চ্যাট বা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা একে অপরের গোপনীয়তা অনুসন্ধান করো না।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)

রাসুল (সা.) বলেছেন,

“মুসলমানের জন্য হারাম তার ভাইয়ের সম্পদ ও সম্মান।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)

অশ্লীলতা, গীবত ও ফিতনা ছড়ানো ডিজিটাল মাধ্যমেও বড় গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়াতে চায়, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি রয়েছে।” (সুরা নূর, আয়াত: ১৯)

প্রযুক্তি ব্যবহারে সময়ের সঠিক ব্যবহার জরুরি। অপ্রয়োজনে দীর্ঘ সময় গেম বা রিলসে কাটানো মাকরুহ। রাসুল (সা.) বলেছেন,

“দুটি নেয়ামত সম্পর্কে মানুষ প্রতারিত হয়—স্বাস্থ্য ও অবসর।” (বুখারি, হাদিস: ৬৪১২)

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তথ্যের নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো, যদিও তা আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হয়।” (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫২)

ইসলামী দাওয়াহ ও শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার প্রশংসনীয়। অনলাইনে কোরআন শিক্ষা, হাদিস ক্লাস বা ইসলামী কনটেন্ট তৈরি করা সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন,

“যে মানুষকে সৎপথে আহ্বান করে, তার জন্য তত সওয়াব—যতজন সেই পথে চলে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৪)

অন্যদিকে, হ্যাকিং, ফিশিং বা ভাইরাস ছড়ানোর মতো কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।” (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)

শেষ পর্যন্ত ইসলামী দৃষ্টিতে ডিজিটাল নৈতিকতার মূলনীতি হলো এই হাদিস:

“সেই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান, যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” (বুখারি, হাদিস: ১০)
আজকের যুগে এ বাণী ডিজিটাল জবান ও কী-বোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর