বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা মোকাবিলায় সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘গণতন্ত্রের টর্চবাহক’ হিসেবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, “যার অপেক্ষায় আজ পুরো বাংলাদেশ, সেই গণতন্ত্রের টর্চবাহক তারেক রহমান ইনশাআল্লাহ আগামী ২৫ তারিখ দেশে ফিরছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ।”
তিনি বলেন, বিএনপির দেশ গড়া ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন, প্রত্যয় ও রূপরেখা—তা তারেক রহমানের নেতৃত্বেই প্রণীত। “আজকের ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিক অংশ,” বলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেতার প্রত্যাবর্তনে রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে।
আমীর খসরু বলেন, “তারেক রহমানের আগমনে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন নতুন গতি পাবে। তার নেতৃত্বেই আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দীর্ঘদিনের আন্দোলনে সফল হয়েছি। সেই আন্দোলনের নায়ক ও গণতন্ত্রের টর্চবাহক আবার দেশে ফিরছেন।”
সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির ওপর হামলাসহ আরও কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। “দেশ যখন স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অনুভব করছে, তখন এসব ঘটনা গভীর উদ্বেগের,” বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি একটি নতুন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারার স্বপ্ন দেখছে। “গত ১৭ বছর ধরে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার মানুষের মনোজগতে ৫ আগস্টের পর যে পরিবর্তন এসেছে, তা বিবেচনায় রেখে তারেক রহমান একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতি ধারণ করেছেন।”
এর বিপরীতে একটি ভিন্নধর্মী রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মবক্রেসি, বলপ্রয়োগ, অপমান ও হেয় করার রাজনীতি—যেকোনো অজুহাতে অস্থিতিশীলতা তৈরির এ প্রবণতা গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়।” এ প্রেক্ষাপটেই তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২৫ তারিখ আমাদের নেতা দেশে ফিরছেন। সেদিন থেকেই ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে। সবাইকে সেই লক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
আমীর খসরু আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু বিএনপির জয় নয়, এটি হবে গণতন্ত্রের জয়। “গণতন্ত্রের টর্চবাহক হিসেবে বিএনপির ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে, তা সবাইকে সম্মিলিতভাবে পালন করতে হবে।”
দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সুফল ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। “শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতিতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হবে।”
উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির অগ্রাধিকার হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ। “উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প নয়, বরং মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। মৌলিক চাহিদা পূরণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সারা দেশ থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: