দেশের মানুষ এখন আর কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চায়—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “জনগণের জীবনে বাস্তব উন্নয়ন, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে গ্রহণ করা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। কারণ, বিএনপি বিশ্বাস করে—জনগণই আমাদের রাজনীতির মূল ভিত্তি।”
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী যুবদলের আয়োজনে “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি” উপলক্ষে আয়োজিত “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা” শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “আমাদের পরিকল্পনার অন্যতম একটি লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানো। এই গাছগুলো যেমন পরিবেশ রক্ষা করবে, তেমনি বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগ থেকেও দেশকে সুরক্ষা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “গত ১৭ বছরে দেশের মানুষ মৌলিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা আদায়ে নিরবিচারে আন্দোলন করেছে। আজ এই সভামঞ্চে উপস্থিত শহীদ পরিবার ও নির্যাতিত মানুষেরাই তার বাস্তব প্রমাণ। শুধুমাত্র জুলাই-আগস্ট নয়, গত দেড় দশকজুড়েই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। তাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে আমাদের সামনে এগোতেই হবে, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া সম্ভব।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এখন বাস্তব পরিবর্তন চায়। সে আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে আমরা নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করছি। আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টর নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছি। লক্ষ্য হচ্ছে—প্রত্যেক মানুষকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা।”
তারেক রহমান জানান, বিএনপি পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করছে। এর মধ্যে হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগ পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। “এই পরিকল্পনার আওতায় হেলথকেয়ার কর্মীদের ৮০ শতাংশই হবেন নারী। এতে একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে, অন্যদিকে তারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন,” বলেন তিনি।
তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “যদি সরকার গঠনের সুযোগ পাই, তাহলে যেকোনো মূল্যে সারা দেশে আবারও খাল খনন কর্মসূচি শুরু করব। এটি হবে জনগণ রক্ষায় কার্যকর একটি উদ্যোগ।”
যুবদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “জনগণের আস্থা অর্জন করাই হচ্ছে প্রকৃত নেতৃত্ব। প্রশাসনিক সহায়তায় নেতৃত্ব প্রদর্শন করা যায়, কিন্তু জনসমর্থন ছাড়া তা টিকিয়ে রাখা যায় না। তাই জনগণের আস্থা ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন, মানবাধিকার কর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন, নিখোঁজ অ্যাডভোকেট সোহেল রানা, চিকিৎসক সায়েম আল মনসুর ফয়েজী, শহীদ মোসলেহ উদ্দিনের পুত্র আপন, শহীদ ইয়াহিয়া আলীর কন্যা তাইয়েবা খাতুন, হাফিজুর রহমান সুমনের স্ত্রী বিধী আখতার এবং নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আখতার নেহা।
এছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নীরব ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: