[email protected] রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ স্বীকার করলেন নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৫ ৮:০৯ পিএম

সংগৃহীত ছবি

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অবশেষে ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এ বিষয়ে মন্তব্য করার পর প্রতিক্রিয়ায় নুর বলেন, “স্যার (কলিমুল্লাহ) একটু বাড়িয়ে বলেছেন, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। বিদেশে গেলে অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, এটাই স্বাভাবিক।”
তিনি আরও বলেন, “দুই বছর আগে এক কফিশপে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেছিলাম। তবে কফি খাওয়া কিংবা কোনো মিটিং হয়নি। তখন আমি বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম।”

অধ্যাপক কলিমুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, “ইসরায়েলের কোনো নাগরিকের সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হলে তাকে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। নুরুল হক নুর যখন মধ্যপ্রাচ্যে সফরে ছিলেন, তখন মেন্দি সাফাদির সঙ্গে কফি মিটিং করেছিলেন বলে নানা জটিলতার মুখে পড়েছিলেন। সেই সময় আমি তাকে রক্ষা করতে অনলাইনে একটি শো করি।”
তবে তিনি আরও বলেন, “মেন্দি সাফাদি ইহুদি নন, তিনি দ্রুজ ধর্মাবলম্বী। একজন মুসলমানের সঙ্গে আরেক মুসলমান কফি খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
এই বক্তব্যের জবাবে সেমিনারের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান বলেন, “দ্রুজ একটি স্বতন্ত্র ধর্ম, এটি ইসলাম ধর্মের উপধারা নয়।”

ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের ঘটনায়। পরে আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই সাফাদিকে ঘিরে নানা রাজনৈতিক গুঞ্জন তৈরি হয়।
মেন্দি সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য এবং একসময় ইসরায়েলি মন্ত্রী আয়ুব কারারের চিফ অব স্টাফ ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি’ নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার দাবি করে। যদিও এ সংগঠনের প্রকৃত কার্যক্রম ও অর্থায়ন নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

২০২৩ সালে মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরুল হক নুরের একটি বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে এলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যদিও নুর এ সাক্ষাৎ অস্বীকার করে একে ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছিলেন, মেন্দি তখন প্রকাশ্যে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তাদের এই সাক্ষাৎ কাতারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এরপর থেকেই সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি নুরের ওপর নিবদ্ধ হয় এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় পড়েন।

বাংলাদেশ সরকার এখনও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ’ শব্দটি তুলে নেওয়া হয়, যা নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ দাবি করে, বাংলাদেশ সরকার একটি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান থেকে নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে, যদিও সরকার এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

সেমিনারে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ জানান, বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমেদ ১৯৭২ সালে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। ইসরায়েল তখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহ দেখালেও ভারতের আপত্তির কারণে সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।

 

এই প্রেক্ষাপটে নুরুল হক নুর বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য এই ইস্যুগুলো টেনে আনা হচ্ছে। আমার দলের ভাঙন ঘটাতে অপচেষ্টা চলছে।”

এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ইসরায়েল সম্পর্ক, রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা এবং কূটনৈতিক ট্যাবু নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর