আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন নিজের জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতি তুলে ধরে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, "সেদিন বেঁচে ফেরা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত।"
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়াল-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে কথা বললেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমি আমার সংসদীয় এলাকার নিজ বাসা ছেড়ে পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নিই। চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। পরিস্থিতি ছিল অরাজক। সংসদ এলাকা পর্যন্ত মিছিল ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় লুটপাট। মনে হচ্ছিল, এটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান নয়, বরং লুটপাটের অভ্যুত্থান।”
আশ্রয়ের বাসাটিও হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। “তারা জানত না আমি ওই বাসায় আছি। আমি ও আমার স্ত্রী বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এমনকি বাথরুমের ভেতরের জিনিসপত্রও ভেঙে ফেলা হয়,” বলেন কাদের।
তিনি আরও বলেন, “আমার স্ত্রী বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিলেন আমি অসুস্থ, যেন ভেতরে না আসে। কিন্তু তারা জোর করেই ঢোকার হুমকি দেয়। আমি বললাম, দরজা খুলে দাও।”
এরপর ৭-৮ জন যুবক ঢুকে পড়ে। শুরুতে তাদের আচরণ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে যায় মনোভাব। কেউ একজন বলে, ‘নেত্রী চলে গেলেন, আপনি যাননি কেন?’ তারপরই তারা ছবি তুলতে শুরু করে, কেউ কেউ সেলফিও নেয়। কাদের ধারণা করেন, তারা হয়তো তাকে চিনে ফেলেছিল।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন কেউ কেউ তাকে জনতা বা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে।
তবে, ওই যুবকদের মধ্য থেকেই দু’জন তাকে ও তার স্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। একটি শার্ট, লাল ব্যাজ ও মুখে কালো মাস্ক পরিয়ে তারা কাদেরকে গণভবনের দিকের একটি সড়ক ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়।
“রাস্তায় হঠাৎ একটি খালি ইজি বাইক এসে পড়ে। তখন চারপাশে কোনো যানবাহন ছিল না।
ওই দু’জন আমাকে গাড়িতে তোলে এবং চেকপোস্টে বলেছিল, ‘চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিচ্ছি।’ এইভাবেই আমাকে অনেক দূরের একটি জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়,” বলেন কাদের।
সেদিনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ভাবতেও পারিনি, যারা কয়েক মিনিট আগে হামলা করেছিল, তারাই পরে আমাদের রক্ষা করবে। এটা ছিল এক অলৌকিক রক্ষা পাওয়া।
এসআর
মন্তব্য করুন: