[email protected] বুধবার, ৭ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা: নতুন শাসনব্যবস্থার ঘোষণাপত্র পাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪:৫৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নতুন গতিপথ নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। শহীদ ২০০০-এরও বেশি ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং ২২,০০০ বিপ্লবীর রক্তে স্নাত এই অভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লব পরিষদ আজ যাত্রাবাড়ী শহীদী চত্বরে একটি নতুন ঘোষণাপত্র প্রকাশ/পাঠ করেছে। এই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের জন্য শান্তি, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

জুলাই বিপ্লব পরিষদের প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল, বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রাম ও মুক্তির চেতনায় পরিপূর্ণ। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেও নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জাতি বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের রক্তক্ষয়ী ঘটনাগুলোর পর, পরিষদ এই ঘোষণা দিয়েছে যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপ্লবী সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।

পরিষদ ঘোষণা করেছে, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপ্লবী সরকারে রূপান্তরের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায়, এটি জনগণের সাথে পরিহাস হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঘোষণাপত্রের মূল ধারা

১. নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা

গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক শাসন এবং সাংবিধানিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

  • জনগণ হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস।
  • সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষায় ন্যায্য ও উদার শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি

রাজনৈতিক বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটার উদ্যোগ।

  • সকল দল ও মতকে অন্তর্ভুক্ত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি।
  • ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ।

৩. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

  • কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ।
  • দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
  • জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন।

৪. সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতা

সমাজে সাম্য ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতি।

  • নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ।
  • সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ।

৫. পররাষ্ট্রনীতি: সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে শান্তি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ভিত্তিতে।

  • আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ভূমিকা।
  • বিশ্ব শান্তি এবং মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

৬. বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন।

  • অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
  • মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৭. পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই প্রকল্প গ্রহণ।

  • বনভূমি, নদী এবং জলাভূমি সংরক্ষণ।
  • পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার।

৮. মুজিববাদ থেকে মুক্তি: স্বাধীনতার মূল আদর্শে ফিরে যাওয়া

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিত্তি করে জাতির পুনর্গঠন।

  • ব্যক্তিকেন্দ্রিক মতাদর্শ পরিহার করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা।
  • জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা।

জুলাই বিপ্লব পরিষদের এই ঘোষণাপত্র ২০০০ শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত, এবং ন্যায়ভিত্তিক দেশ গঠনে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর