[email protected] সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫
২০ শ্রাবণ ১৪৩২

জামায়াত আমিরের বক্তব্যের সমালোচনা, শিক্ষককে মারপিট ও মোবাইল ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ২:৫১ এএম

ফাইল ছবি

খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোঃ হুমায়ুন বিশ্বাস নামে এক শিক্ষককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মারপিট করেছে স্থানীয় জামায়াতের নেতা কর্মীরা।

ফেসবুকে জামায়াত আমীরের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করায় তাকে রোববার রাত ৯টার দিকে হয়রানী করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এরপর থানার ওসি এবং ইউএনও কে দিয়ে ডাকিয়ে শাসিয়েছন জামায়াত নেতারা। বিষয়টি নিয়ে খুলনায় নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান লন্ডন সফরকালে আওয়ামীলীগকে নিয়ে মন্তব্য করেন।

সেই মন্তব্যের জের ধরে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন বিশ্বাস তার ফেসবুক জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেন।

তার সমালোচনার বিষয়টি স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগোচর হয়। শিক্ষক হুমায়ুন বিশ্বাসের পোস্টের নিচে অনেকেইে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন।

এরপর ওই শিক্ষক পোস্টটি ডিলিট করে দেন। একই সাথে এই ধরনের পোষ্টের জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি।

রোববার রাতে স্থানীয় কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মী তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেদকাশীর কাছারী বাড়িতে নিয়ে কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রেখে ব্যাপক মারপিট করে।

এসময় তার ব্যবহৃত মোবাইলটি ভাংচুর করে। একই সাথে তাকে এ বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে হুমকি দেয়।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ওই শিক্ষকের পরিবারের একাধিক সদস্য জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। যারা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদেরও বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক হুমায়ুন বিশ্বাস বলেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে আমাকে ফোন করে ইউনিয়ন কার্যালয়ে ডাক দেয় উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর সুজাউদ্দিন। তবে ব্যস্ততা থাকায় আমি যেতে পারিনি।

এরপর আমাকে জামায়াত নেতা ইউনিয়নের সেক্রেটারি এনামুল, যুব নেতা আরিফুল, জামিল, সোহাগ মটর সাইকেলে এসে বাড়ির সামনে থেকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সাথে যেতে না চাইলে আমাকে মারধর করে এবং আমার ফোনটি ভেঙে ফেলে।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমাকে চ্যাংদোলা করে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে কাছারীবাড়ি ইউনিয়ন কার্যালয়ে নিয়ে কয়েকঘণ্টা বসিয়ে রাখে।

এসময় উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল্লাহ, ইউনিয়ন আমীর মাস্টার নুর কামাল মামলার হুমকি এবং পুলিশের হাতে উঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানায়।

তিনি আরো বলেন, আমি লেখাটি লেখার পর বুঝতে পারি যে এটা ঠিক হয়নি। যেকারণে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেই এবং অন্য পোস্টের মাধ্যমে সকলের কাছে ক্ষমা চাই।

এরপরও সকলের সামনে দিয়ে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে মারপিট করে। আমাকে যখন মারা হয় তখন সেখানে আমার অনেক ছাত্রও ছিলো। আমি লজ্জায় কুঁকড়ে মরে যাচ্ছিলাম। এরপর ওই ঘটনা যাতে কাউকে না বলি সেজন্য আমাকে অব্যহতভাবে মুঠোফোনে চাপ দিতে থাকে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পরদিন অর্থাৎ গতকাল সোমবার সকালে ওই শিক্ষককে থানারও ওসি এবং ইউএনও ডেকে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে।

সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, থানার ওসি এমদাদুল হক, ইউএনও রুলি বিশ্বাস, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপর কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়ে ওসি ইমদাদুল হক বলেন, ওই শিক্ষকের পোস্টকে ঘিরে জামায়াত নেতারা ক্ষুব্ধ ছিলো। সেজন্য শিক্ষককে ডেকে এনে পোস্ট ডিলিটসহ এ ধরনের কর্মকান্ড না করার জন্য সতর্ক করা হয়।

উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল্লাহ মারপিটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাকে মারপিট করা হয়নি। তাকে ডেকে এনে পোস্টের বিষয়ে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিলো। তিনি রাজি না হওয়ায় বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর