[email protected] বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
৩ পৌষ ১৪৩২

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে প্রধান উপদেষ্টার নৈশভোজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১১ এএম

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সফরে আসা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের

সম্মানে রাজধানীর একটি হোটেলে নৈশভোজের আয়োজন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাদের খোঁজখবর নেওয়ার মধ্য দিয়ে নৈশভোজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

শনিবার সকালে শেরিং তোবগে দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নৈশভোজের সমাপ্তি হয়।

নৈশভোজে দেওয়া বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ ও ভুটানের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃঢ়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান, সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। শেরিং তোবগেকে তিনি ‘দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও নিবেদিত নেতা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ভুটান সবসময়ই বাংলাদেশের দৃঢ় বন্ধু।

ইউনূস স্মরণ করেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ভুটান অন্যতম ছিল — যা দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের বন্ধন গড়ে উঠেছে প্রাচীন বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিতদের ঐতিহ্যের ওপর, যা এখনও সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।

এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ পর্ব অতিক্রম করছে, যেখানে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায়সংগত অগ্রগতি নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। এই যাত্রায় প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিকেলে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, বাণিজ্য, জ্বালানি, শিক্ষা, পর্যটন এবং যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

ভুটানের উন্নয়ন দর্শন ও পরিবেশবান্ধব নীতিকে প্রশংসা করে ইউনূস বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মানবকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত রাখার ক্ষেত্রে ভুটান বিশ্বের জন্য উদাহরণ। তিনি জানান, বাংলাদেশও শূন্য নিট কার্বন নির্গমন, দারিদ্র্য নির্মূল, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভুটানের ভূমিকাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ–ভুটান–নেপাল একসঙ্গে জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করবে।

শেরিং তোবগে তার বক্তব্যে বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করে বলেন, প্রতিবার ঢাকা সফরেই দুই দেশের বন্ধুত্বের উষ্ণতা নতুনভাবে উপলব্ধি হয়। তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নোবেলজয়ী উন্নয়ন দর্শনের প্রশংসা করেন এবং "তিন শূন্য"— শূন্য কার্বন, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য বেকারত্ব— ধারণাকে মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করেন।

তোবগে বলেন, ভুটান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিশ্বাস, ইতিহাস ও সহযোগিতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মানবসম্পদ, বাণিজ্য, পরিবহন যোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে সম্পর্ক ইতোমধ্যে গভীর হয়েছে। সদ্য সই হওয়া সমঝোতা স্মারক ভবিষ্যতে এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তার ভাষায়, “আমরা অতীত অর্জন উদযাপন করছি এবং নতুন উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।”

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর