আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
দলটির নেতারা বলছেন, প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ শুধু সময়োপযোগীই নয়, এটি বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবিও। এ লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছে দলটি।
ইতোমধ্যে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। যেসব দেশের দূতাবাস, কনস্যুলেট ও হাইকমিশনে এই কার্যক্রম চলছে, সেখানে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রবাসীদের সহযোগিতা করছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল রোববার (২ নভেম্বর) প্রবাসে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন করা হবে। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলের লা ভিটা ব্যাঙ্কুয়েট হলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন এবং দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
দলটির নেতারা মনে করছেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালুর মাধ্যমে প্রবাসে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি আরও মজবুত হবে এবং প্রবাসী সদস্যদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়বে। বিএনপি মনে করে, দীর্ঘদিনের দাবির পর প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। এর মধ্যে ১০ শতাংশেরও বেশি নাগরিক বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করছেন। প্রায় ৪০টি দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন বাংলাদেশি প্রবাসী আছেন।
সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে—প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকায়ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করছেন। সবচেয়ে কম প্রবাসী রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে, মাত্র আড়াই হাজার।
ইসি জানিয়েছে, এসব প্রবাসীর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশের এনআইডি রয়েছে। নির্বাচনে অন্তত ৫০ শতাংশ প্রবাসী ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন,
“বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা দেখেছি, প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসে আছেন। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের এনআইডি আছে। তাই ৫০ লাখের মতো প্রবাসী ভোটারকে নির্বাচনে যুক্ত করা সম্ভব হবে।”
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডাক বিভাগের সহযোগিতায় প্রবাসীদের ভোট নেওয়া হবে ‘পোস্টাল ব্যালট’ ব্যবস্থায়। এজন্য একটি ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। প্রবাসীরা মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাই করে নিবন্ধিত ভোটার হিসেবে ভোট দিতে পারবেন। ব্যালট ডাকযোগে পাঠানো হবে এবং ভোট দেওয়ার পর কিউআর কোড ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে তা ফেরত পাঠানো যাবে।
ভোটাররা ব্যালটে পছন্দের প্রতীকে চিহ্ন দিয়ে সেটি বিশেষ সিলযুক্ত খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দেবেন। পরে ডাক বিভাগ সেই ব্যালট ইসিতে পাঠাবে, সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও সাংগঠনিক সংযোগ জোরদারে বিএনপি যে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করছে, সেটি দলের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দলটির নেতারা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু সদস্য নবায়ন প্রক্রিয়াকে সহজ করবে না, বরং দলের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও তথ্যসংরক্ষণে স্বচ্ছতা আনবে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠিত করতে এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার হবে।
বিএনপি মনে করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে—দল তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের রাজনীতিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এসআর
মন্তব্য করুন: