প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাদের কল্যাণে কাজ করার অংশ হিসেবে প্রবাসীদের জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন, সেই প্রবাসীদের প্রতি সরকারের কৃতজ্ঞতা রয়েছে। সরকার যাওয়ার আগে আমরা তাদের জন্য কিছু করে যেতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে প্রবাসীদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী চলা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় দুবাই, শারজাহ ও আজমানে অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভ থেকে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশ।
দুই দিন পর, দাঙ্গা সৃষ্টি, যোগাযোগে বাধা এবং সম্পদের ক্ষতির অভিযোগে ইউএই’র আদালত তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। এর জেরে বাংলাদেশিদের ভিসা সুবিধাও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউএই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বসেন। ঢাকায় নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় আইনি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউএই’র প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দেন, যা ছিল তাদের পরিবার ও দেশের জন্য এক বড় সুখবর। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে এসেছে আশাতীত সাফল্য।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে এসেছে ৩০ হাজার ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬.৮০ শতাংশ বেশি।
এই পরিমাণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়।
কর্তৃপক্ষের মতে, দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় অনেক প্রবাসী এই সময়টিতে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে।
প্রবাসীদের অবদানকে সম্মান জানাতে এবং তাদের সেবায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একইসঙ্গে, গণতন্ত্রের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে জেল খাটা প্রবাসীদের মুক্তি প্রমাণ করে, সরকার প্রবাসীদের ত্যাগ ও সাহসিকতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: