[email protected] রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের উদ্ধার: জীবনের হুমকির কারণেই পদক্ষেপ—সেনাসদর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৫ ৭:৫৪ পিএম

সংগৃহীত ছবি

কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং সরাসরি জীবনের হুমকির ভিত্তিতে গোপালগঞ্জ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উদ্ধার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সেনাসদর।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “জীবন রক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কোনো দল বা ব্যক্তি নয়, আমরা যারা সরাসরি হুমকির মধ্যে ছিলেন, তাদের উদ্ধার করেছি।”

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত হন এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জনের বেশি আহত হন। পরে হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের একটি এপিসি-তে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় সেনাবাহিনী।

সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়, সেনাবাহিনী কি এনসিপির প্রতি কোনো বিশেষ নজর রাখছে? জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতহীন। কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, কারও জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে, আমরা সবার ক্ষেত্রেই একইভাবে সাড়া দেবো। এটি ছিল মানবিক দায়বদ্ধতা।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তখন সেনাবাহিনী নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না। আমরা আগে যেমন পদক্ষেপ নিয়েছি, ভবিষ্যতেও একইভাবে দায়িত্ব পালন করব। সিনিয়র নেতৃত্ব থেকেও এমনই নির্দেশনা রয়েছে।”

গোপালগঞ্জের সহিংসতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি দুঃখজনক ঘটনা। কেন সেখানে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছিল, সেটি অনুসন্ধানে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমেই প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হবে।

সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত মেজর সাদিক কর্তৃক আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং বর্তমানে তদন্তাধীন। তার দোষ প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতার বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, “ইউপিডিএফ, জেএসএসসহ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সহিংসতা দেখা দেয়। সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে শুধু সেনাবাহিনী নয়, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত ভূমিকা জরুরি।”

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মির মধ্যে যোগসাজশের বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “দুই পক্ষের জাতিগত ও কৌশলগত মিল থাকায় এ ধরনের সংযোগ অস্বাভাবিক নয়। তবে কেএনএফ বর্তমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।”

তিনি জানান, “সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কেএনএফের অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে, অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে এবং তাদের বেইজ ও প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করা হয়েছে। কেএনএফকে সমূলে উৎপাটনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

তিনি বলেন, “একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্য মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস করি, সব বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর