দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
একদিকে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরোনো 'মাস্ক সিন্ডিকেট'। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মাস্কের বাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি জনস্বাস্থ্যও পড়ছে হুমকির মুখে।
সম্প্রতি মাস্ক উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে চাহিদার তুলনায় কম পণ্য বাজারে ছেড়েছে। ফলে ফার্মেসিগুলোতে পর্যাপ্ত মাস্ক মিলছে না। অনেকেই আবার আগেভাগে মজুত করে রাখছেন, যেন সংক্রমণ বাড়লে তা আরও বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২ জনের মৃত্যু এবং ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সময় ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৮.৬২ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০, অপরজনের ৭১ থেকে ৮০ বছর। একজন ঢাকায় এবং অন্যজন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বর্তমান ধরনটি তুলনামূলক মৃদু হলেও বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড, চকবাজার, সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস্কের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
আগে যেখানে ৫০ পিসের একটি সার্জিক্যাল মাস্কের বক্স পাওয়া যেত ১০০ টাকায়, এখন তা ১৪০–১৫০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এই দাম পৌঁছেছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। একইভাবে, আগে যে এন-৯৫ মাস্ক বিক্রি হতো ১০ টাকা দরে, সেটি এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্রাপুরের চৈতি ফার্মেসির মালিক রাহুল পাল বলেন, “মাস্কের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না। স্কয়ার কোম্পানির মাস্ক অর্ডার দিয়েছি চার–পাঁচ দিন আগে, এখনো পাইনি।”
২০২০ সালে প্রথম ঢেউয়ের সময় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গ্লাভসের বাজারে একই ধরনের সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। তখন বাজারে নিম্নমানের পণ্য, ভুয়া সনদধারী মাস্ক এবং অতিরিক্ত দামে বিক্রির ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছিল।
এবারও সেই একই কৌশলে বাজারে আসছে বিভিন্ন সন্দেহজনক কোম্পানির মাস্ক। অধিকাংশ মাস্কের মোড়কে লেখা রয়েছে ‘ISO’ বা ‘CE’ সনদ, কিন্তু বাস্তবে এসব সনদের সত্যতা যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এখনো পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাস্ক বাজারে কোনো অভিযান বা তদারকির তথ্য জানায়নি। সরকারি ওয়েবসাইটেও মাস্কের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি, ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামেই মাস্ক কিনছেন।
ঢাকার একটি ফার্মেসিতে মাস্ক কিনতে গিয়ে তৌহিদুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, “সংক্রমণ বাড়ছে শুনে মাস্ক কিনতে এলাম। কিন্তু মাস্ক নেই, আর দামও আগের চেয়ে দ্বিগুণ। বাড়তি দাম দিয়েও পাচ্ছি না।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক হচ্ছে সবচেয়ে প্রাথমিক ও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।
তাদের মতে, এখনই সরকারের উচিত:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট ২৯,৫০২ জন মারা গেছেন এবং ২০,৫১,৮০০ জন শনাক্ত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৩ সালের মে মাসে করোনাকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা থেকে সরিয়ে নিলেও বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন, “করোনা চলে যায়নি, বরং রূপ বদলে ফিরে আসছে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: