[email protected] বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
১৭ বৈশাখ ১৪৩২

আইন প্রয়োগের অভাবে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ৮:৩২ পিএম

ফাইল ছবি

ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন থাকলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

 বিশেষ করে শিশুরা এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে। অ্যাডভোকেসি সংস্থা ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)’ জানিয়েছে, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিতে এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতিতে ভুগছে। অথচ ২০১৩ সালে প্রণীত ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন অনুযায়ী, ভিটামিন ‘এ’ ছাড়া কোনো ভোজ্যতেল বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তবে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইসিডিডিআরবি'র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই খোলা ড্রামে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে ভিটামিন ‘এ’ একেবারেই নেই, এবং ৩৪ শতাংশে রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে। শুধুমাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের তেলে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মাত্রার ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। ফলে জনগণ এ আইনের সুফল থেকে কার্যত বঞ্চিত হচ্ছে।

এ তথ্য উঠে আসে মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে। এতে অংশ নেন বিএসটিআই-এর উপপরিচালক এসএম আবু সাঈদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

বক্তারা বলেন, নন-ফুড গ্রেড ড্রামে খোলা তেল পরিবহন করা হয়—যেগুলো আগে কেমিক্যাল বা লুব্রিকেন্ট সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছিল। এতে তেলের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে উৎপাদন বা সরবরাহের কোনো তথ্য না থাকায় তেলটির উৎস শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না, যা আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা।

সেমিনারে জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের জুলাই থেকে খোলা সয়াবিন তেল এবং একই বছরের ডিসেম্বর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ফলে জনগণের হাতে নিরাপদ ভোজ্যতেল পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি থেকে শিশুদের অন্ধত্ব ও গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে রিকেটস, হাড় ক্ষয়, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বক্তারা বলেন, প্রতিদিনের খাদ্যের মাধ্যমে এসব ভিটামিন সরবরাহের সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায় হলো ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ।

সেমিনারে আলো ফিল্টার করতে সক্ষম প্যাকেজিং ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। কারণ সূর্যের আলো কিংবা উজ্জ্বল আলোয় ভিটামিন ‘এ’ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে বাজারের অনেক বোতলই এই আলো প্রতিরোধে অক্ষম, ফলে তেলের পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাই স্বচ্ছ নয়, বরং আলো প্রতিরোধী বোতল ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর