জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ-পিয়ের লাক্রোয়ার সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অবদান, বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন, নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ, এবং নতুন নতুন বাহিনী অন্তর্ভুক্তির বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে ফিমেল প্লাটুন, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি এবং দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ফরমড পুলিশ ইউনিট (FPU) পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “একসময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল শীর্ষ অবস্থানে। বর্তমানে আমাদের অবস্থান তৃতীয়, নেপাল ও রুয়ান্ডা এখন শীর্ষ দুই স্থানে রয়েছে। আমরা আবারও প্রথম অবস্থানে ফিরতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রশিক্ষিত ফোর্স রয়েছে, যারা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনেও দক্ষ। আমরা বিজিবি ও আনসার সদস্যদেরও এসব মিশনে যুক্ত করতে চাই, এতে জাতিসংঘের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রশংসা করে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “বাংলাদেশের পুলিশ ও সামরিক সদস্যরা বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ।” তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে জাতিসংঘ সচেষ্ট রয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি ফিমেল প্লাটুন প্রস্তুত রেখেছে, যা দ্রুতই মিশনে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনস (DPO)-এর কারিগরি সহায়তা কামনা করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “২০১৩ সালে জাতিসংঘের অনুরোধে বাংলাদেশ সফলভাবে কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে দুটি ফরমড পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করেছিল। বর্তমানে দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশের কোনো এফপিইউ নেই, যা পুনরায় স্থাপন করা প্রয়োজন।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা বলেন, “জাতিসংঘ শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করে আসছে। মহাসচিবের সাম্প্রতিক সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, জাতিসংঘ আরও সময়োপযোগী ও কার্যকর উদ্যোগ নেবে।”
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্মসচিব মু. জসীম উদ্দিন খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: