[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিদায়ী ভাষণে যা বললেন প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ৯:২৪ পিএম

সংগৃহীত ছবি

বিচারকদের অনেক অভিমত রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ও অসামান্য ভূমিকা রাখে—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণের আগে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দেওয়া তার বিদায়ী অভিভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্বে বিচার বিভাগ অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কূটকৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবেও পরিগণিত হয়েছে—এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক বিচারক দুঃশাসনের বলয়কে আড়াল করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার মতে, রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিচার বিভাগের এই নৈতিক বিচ্যুতি জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের পথে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম অনুঘটক।

দেশজুড়ে কর্মরত বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে জীবনের পরম দায় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। অধ্যয়ন, গবেষণা ও বিচারচর্চায় অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে সর্বক্ষণ নিজেদের নিয়োজিত রাখার আহ্বান জানান তিনি। কেবল দায়িত্ব পালন নয়, বরং কাজের উৎকর্ষ অনুসন্ধানকেই সব প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি করার তাগিদ দেন।

প্রথাগত শিক্ষার বাইরে এসে সমাজ, সংস্কৃতি, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তার নানা ক্ষেত্রে জ্ঞানের পরিধি বিস্তারের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা—যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশবিজ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তা—সম্পর্কেও ধারণা গভীর করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, একজন বিচারক কখনোই নিশ্চিত থাকতে পারেন না, মানুষের জীবনের কোন ঘটনাটি কখন আদালতের বিবেচনায় আসবে এবং কোন প্রশ্ন বিচারবোধ ও বিচক্ষণতাকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলবে। সমাজের প্রতিটি স্পন্দন ও নানামাত্রিক জ্ঞান বিচারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রায় লেখায় প্রভাব ফেলে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঐতিহাসিক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, পৃথক সচিবালয় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দেশের আপামর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষার প্রধান নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট অন্যায়ের দায় এড়াতে অন্যের দিকে আঙুল তোলার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক তোষামোদ পরিহার এবং স্বল্প সময়ে জনগণের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালনের ওপরও জোর দেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন বৃহত্তর রাজনীতির অংশ হলেও বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কেবল ক্ষমতাবান শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় ভারসাম্য বজায় রাখাই যদি বিচার বিভাগের কাজ হয়, তবে তার স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রয়োজন পড়ে না। রাষ্ট্র যে আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ দেশের সব জেলার জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর