জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে প্রিজনভ্যানে ট্রাইব্যুনাল ছাড়লেন পলক

জুলাই–আগস্ট আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যার

অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৬ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রিজনভ্যানে তোলা মুহূর্তেই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে জাতীয় সংগীত গাইতে শোনা যায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন তাল মিলিয়ে সংগীত গাইতে শুরু করেন।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর ওই ১৬ জনকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। এর আগে মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে তদন্ত শেষ করতে অতিরিক্ত দুই মাস সময় চান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল–১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদনের তারিখ নির্ধারণ করেন।

এই মামলায় ৪৫ জনের মধ্যে চারজন—ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট মামলার কয়েকজন—ইতোমধ্যে ফরমাল চার্জের আওতায় আসায় তাদের বিষয়ে অব্যাহতি চাওয়া হয়। বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে প্রসিকিউশন জানিয়েছে।

সকালে কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় অভিযুক্ত ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তারা হলেন—
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বেসরকারি শিল্প–বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
তবে অসুস্থতার কারণে সাবেক এমপি ফারুক খানকে আনা হয়নি।

এই মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, ইনু এবং পলকের বিরুদ্ধে আলাদা করে ফরমাল চার্জ গঠন করেছে প্রসিকিউশন। ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে চলছে।
এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যায় ভূমিকা রাখার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-১। জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
আনিসুল ও সালমানের বিরুদ্ধে কারফিউ দিয়ে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের হত্যার অভিযোগও শুনানির জন্য গৃহীত হয়েছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধেও ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে।

এর আগে, ১৫ অক্টোবর পৃথক আরেক মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে প্রসিকিউশন সময় চাইলে অতিরিক্ত দুই মাস সময় মঞ্জুর করা হয়।
২০ জুলাইও একই মামলার জন্য আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়, তবে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয়।

যে মামলার ধারাবাহিকতায় আজকের হাজিরা, তার সূত্রপাত এ বছরের ২০ এপ্রিল; সেদিন ১৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় এবং তদন্তের জন্য নতুন সময় দেওয়া হয়। পরে ২০ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।
সব মিলিয়ে একসময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা চার্জ দাখিল করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে প্রসিকিউশন।