[email protected] রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সূচনা বক্তব্য রোববার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২ আগষ্ট ২০২৫ ৮:২৮ পিএম

সংগৃহীত ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচার শুরু হচ্ছে।

রোববার (৩ আগস্ট) এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। পরদিন সোমবার (৪ আগস্ট) থেকে শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ।

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এ বিচারকাজ পরিচালিত হবে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই মামলার আসামির তালিকায় রয়েছেন—

  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল,
  • পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের অনুমতি পেলে সূচনা বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। এ মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণও সোমবার শুরু হবে।

গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজ সাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হতে সম্মত হয়েছেন এবং তার আবেদন ট্রাইব্যুনাল অনুমোদন করেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন দমনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়। এটি ছিল একটি মিস কেস (বিবিধ মামলা)।

এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

  • অভিযোগপত্র জমা পড়ে গত ১২ মে।
  • তদন্ত প্রতিবেদনটি ছিল ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে:
    • তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা
    • জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা
    • শহীদদের তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা
  • সাক্ষীর সংখ্যা: ৮১ জন

১ জুন অভিযোগপত্র আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং ১৬ জুন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তারা উপস্থিত না হওয়ায়, আদালত তাদের অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করে এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা চলছে।
১. ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুন ও নিখোঁজ ঘটনার অভিযোগ
২. ২০১৩ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যা সংক্রান্ত মামলা

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দলীয় ক্যাডার ও সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল—এমন অভিযোগ একাধিক পক্ষ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে, যাতে রাজনৈতিক দল হিসেবেও দায়বদ্ধতা নিরূপণ সম্ভব হয়। এর আওতায় আওয়ামী লীগ-এর বিচারও দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ও ১২-দলীয় জোট।

আদালতের অনুমতি থাকলে এই বিচারপ্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ সরাসরি সম্প্রচার করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর