অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সব মামলা রহিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিন্তু গ্রেপ্তার ১৫ জন। যাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের ইনসাইড ক্রাইম বা এমেন্ডমেন্ট এর জন্য মামলা হয়েছে।
মামলা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই, মামলা করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে আমরা বলে দিয়েছি সাবস্টেনশিয়াল এভিডেন্স না পেলে যেন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, গণমাধ্যম ও এ সংক্রান্ত যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা সে অর্থে গণমাধ্যম সংস্কার ও কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা বলেননি ও টেলিভিশনেও আলোচনা হয়নি, পত্রপত্রিকায় ও লেখালিখি করেননি।
কি ধরনের সংস্কার দরকার, কমিশনের এ রিপোর্ট কতটা ইতিবাচক, এ রিপোর্টের দুর্বলতাগুলো কি সেগুলা নিয়ে কথাবার্তা হয়নি। মূলত সেই বিবেচনা থেকেই আজকের এ গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করা হয়েছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেল লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরকারকে খুশি করতে তাদের পছন্দনীয় কথা আবেদনে উল্লেখ করেছে।
তাদের আবেদনের অঙ্গীকারনামায় প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয় যা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন ও কৌশলের সঙ্গে মিলে যায়। আবেদনপত্রেই তারা জানিয়ে দেয় যে তারা রাজনৈতিক দলের চিন্তা চেতনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এসব আবেদনপত্রের ভিত্তিতেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে গত ১৫ বছর।
শফিকুল আলম বলেন, হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরে ট্রাস্ট ডেফিসিট তৈরি হয়েছে, আমরা সে জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি।
সে আমলের কাজগুলো যেন আমাদের আমলে না হয় আমরা চেষ্টা করছি ও আমরা অনেকাংশেই এক্ষেত্রে সফল। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার জন্য আমরা কোনো এডমিনিস্ট্রেটিভ প্রেশার তৈরি করে কাউকে তার সাংবাদিকতা থেকে দূরে সরাচ্ছি না।
মিথ্যা নিউজ হলে বলছি এটি মিথ্যা, প্লিজ এটি সরান। কেউ কেউ সরাচ্ছেন, কেউ সরান না। আমরা শুধু জানিয়ে রাখছি এটি মিথ্যা, সবাই যার যার লিগ্যাল কাজ করুক।
জার্নালিস্ট প্রোকেটশন অর্ডিন্যান্স চাচ্ছেন কিন্তু যারা অপসাংবাদিকতার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাকে কীভাবে আপনি প্রোটেকশন দেবেন? তার প্রোটেকশনটাও তো চিন্তা করা উচিত।
ড. শহিদুল আলম বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স সব আইনগুলোর মধ্যে একটা জায়গায় আমরা দেখেছি কোনো পরিবর্তন নেই।
সেখানে রাজনৈতিক অনুভূতিকে আলাদা করে একটা বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে।
অনুভূতি সবারই আছে, ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিশেষ একটা জায়গা দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি একমাত্র অনুভূতি যেটি সংরক্ষণ করা হবে অন্যান্য ক্ষেত্রে করা হবে না, এ পার্থক্য কেন রাখা সেটি আমাদের ভাববার বিষয়।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মিডিয়াগুলো আটকে যায় মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। তারা টাকা জেনারেট করেন, আয় করেন। তারা এভাবে ক্রিয়েটিভিটি আটকে দেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির ধারা সেটিকে প্রতিহত করে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আমরা যত ভালো কথা বলি না কেন এটি খুব একটা অগ্রসর হতে পারব বলে মনে করি না। এ প্রচলিত দুরবস্থার কাঠামোর মধ্যে যতটুকু পারি সবার সচেতন প্রয়াস ও আমাদের কিছুটা অগ্রতির পথ দেখাবে।
সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেন, এদেশে শুধু আইনি কাঠামো দিয়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
সাংবাদিকদের সরকারের প্রতি রাগ, সাংবাদিকদের সংবাদমাধ্যমের মালিকদের প্রতি রাগ, জনগণের সাংবাদিকদের প্রতি রাগসহ এ যে বহুমুখি রাগ-ক্ষোভ অনাস্থা এটি সহজে দূর হবে না। প্রথমে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকেই এ আস্থা ফেরানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
সোহরাব হাসান বলেন, আজকে সাংবাদিক সমাজ বিভক্ত। কেন বিভক্ত এটির জন্য সরকারকে দায়ী করলে চলবে না। আমাদেরকেই এ বিভক্তি কাটিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য। সাংবাদিকদের সুরক্ষা কিন্তু মালিকের সুরক্ষা নয়, পেশাজীবীদের সুরক্ষা।
পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, মিডিয়া, পলিটিশিয়ান, একাডেমিশিয়ানদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে আমরা কোনোক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনতে পারব না।
জাহেদ উর রহমান বলেন, আমার ভয়ের জায়গা যে, আমাদের কালচার নষ্ট হয়ে গেছে। আমি অনেকের মতো অনেক বেশি আশা করছি না যে হঠাৎ করেই সাংবাদিকতা বা মিডিয়া ঠিক হয়ে যাবে।
পারভিন এফ চৌধুরী বলেন, গত ১৬ বছরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর মাধ্যমে যাকে যখন ইচ্ছা ধরে নিয়ে গেছে।
সেখান থেকে আমাদের সেলফ সেন্সরশিপ যে চলে আসছে দ্য উই আর নট প্রাক্টিশিং জার্নালিজম, রেদার উই আর প্রাক্টিশিং সেলফ সেন্সরশিপ। ওখান থেকে বের হয়ে আমাদের প্রোপার রিপোর্টিং এ আসা দরকার।
এসআর
মন্তব্য করুন: