দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণ কমাতে বহুদিন ধরেই কৃত্রিম বৃষ্টি বা ক্লাউড সিডিং পরিকল্পনা করছিল স্থানীয় সরকার।
ধারণা ছিল—আকাশে বিশেষ রাসায়নিক ছড়িয়ে মেঘকে বৃষ্টিবাহী করা গেলে দূষিত বায়ুমণ্ডল কিছুটা শুদ্ধ হবে, মানুষও স্বস্তি পাবে। কিন্তু কোটি কোটি রুপি ব্যয়ে পরিচালিত সেই পরীক্ষার প্রথম দিনেই দেখা গেল ভিন্ন বাস্তবতা—রাসায়নিক ছড়ালেও আকাশ থেকে এক ফোঁটা পানিও পড়েনি।
মঙ্গলবার দিনজুড়ে দুই দফায় উড়োজাহাজের মাধ্যমে আকাশে সিলভার আয়োডাইডসহ বিশেষ রাসায়নিক যৌগ স্প্রে করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, মেঘের ভেতরের আর্দ্র বাষ্পকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিতে পরিণত করা। তবে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সারাদিনের অপেক্ষার পরও দিল্লি ও আশপাশের কোথাও বৃষ্টিপাতের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
'ব্যর্থ ও ব্যয়বহুল উদ্যোগ’—বিশেষজ্ঞদের মত
পরিবেশবিদরা বলছেন, কৃত্রিম বৃষ্টির প্রকল্পটি শুরু থেকেই ছিল ব্যয়বহুল ও অস্থায়ী সমাধান। তাদের মতে, বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো—শিল্পকারখানার নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণসাইটের ধুলা—নিয়ন্ত্রণে না আনলে কৃত্রিম বৃষ্টি কোনো দীর্ঘস্থায়ী সুফল দেবে না।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বিপুল অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে সরকারকে দূষণ উৎস নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ও কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে।
বিরোধী দল আম আদমি পার্টি (আপ) এই উদ্যোগকে ‘অকার্যকর ও লোকদেখানো পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। দলের নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন,
“কোটি টাকা ব্যয় করে মেঘ ডাকা গেল, কিন্তু বৃষ্টি এল না। শেষ পর্যন্ত কি এখন দেবতার কাছে বৃষ্টি ভিক্ষা চাইতে হবে?”
দিল্লির দূষণ: প্রতি শীতে নতুন বিপর্যয়
প্রতি বছর শীত মৌসুমে দিল্লির বাতাস আরও বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দূষণের মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে।
এই বছরও পরিস্থিতি একই রকম; কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যর্থতায় শহরের মানুষ আরও হতাশ। সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্ন—“বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগেও কেন তারা এখনও শুদ্ধ বাতাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন?”
এসআর
মন্তব্য করুন: