বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও চাঙ্গা হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধের আবহ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে রাশিয়া পাত্তা না দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে উভয় দেশ সমুদ্রে তাদের সামরিক শক্তি জোরদারে মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষত, সাগরের অতল তলে—সাবমেরিন প্রযুক্তিতে—কার আধিপত্য বেশি, সে প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী সাবমেরিন প্রযুক্তিতে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির কাছে রয়েছে ১৪টি ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন, যেগুলো ‘বুমার’ নামে পরিচিত। প্রতিটি সাবমেরিনে মোতায়েন করা যায় ২০টি পর্যন্ত ট্রাইডেন্ট-২ ডি৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অত্যন্ত নিখুঁত। এই সাবমেরিনগুলো সমুদ্রে টানা ১৫ বছর পর্যন্ত বড় ধরনের মেরামত ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক সাবমেরিন বহরও অত্যন্ত শক্তিশালী। এর মধ্যে রয়েছে ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিউলফ-ক্লাস এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস (৬৮৮ ক্লাস) সাবমেরিন। এসব সাবমেরিনে থাকে টমাহক ও হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং এমকে-৪৮ টর্পেডো, যা শত্রু জাহাজ ধ্বংস, নজরদারি, গোয়েন্দা অভিযান ও মাইন যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে—
অন্যদিকে, রাশিয়ার সাবমেরিন বহর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বড়। দেশটির হাতে রয়েছে প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন, যার মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী। এই সাবমেরিনগুলো রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক প্রতিরক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। যদিও রাশিয়ার সাবমেরিন প্রযুক্তি ও অবস্থান নিয়ে সব তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তবুও যেটুকু তথ্য জানা গেছে, তাতে তাদের সক্ষমতা অবহেলার নয়।
রাশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক সাবমেরিন হলো বোরেই-ক্লাস এসএসবিএন। বর্তমানে রুশ নৌবহরে আটটি বোরেই সাবমেরিন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে আকুলা-ক্লাস (শার্ক) সাবমেরিন, যা নিঃশব্দ চলাচলের জন্য বিখ্যাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে পাঁচটি আকুলা-ক্লাস সাবমেরিন সক্রিয় রয়েছে, যেগুলোতে ক্যালিবার, অনিক্স বা গ্রানিত ক্ষেপণাস্ত্র ও টর্পেডো মোতায়েন থাকে।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও নির্ভরযোগ্যতায় এগিয়ে, রাশিয়া সেখানে সংখ্যায় এবং কৌশলগত গোপনীয়তায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা পায়। সাবমেরিন সক্ষমতা এখন শুধু প্রতিরক্ষার বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক আধিপত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের গভীরতা যেন হয়ে উঠেছে আধুনিক স্নায়ুযুদ্ধের নতুন মঞ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রতিযোগিতা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা কেবল সামুদ্রিক নিরাপত্তাই নয়—বিশ্বশান্তির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এসআর
মন্তব্য করুন: