[email protected] মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

গাজা যুদ্ধ বন্ধে ১,০০০ ইসরাইলি রিজার্ভ সদস্যের খোলা চিঠি: নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৫ ৮:০৩ পিএম

ফাইল  ছবি

ইসরাইলি বিমান বাহিনীর ১,০০০ জন সাবেক ও বর্তমান রিজার্ভ সদস্য গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দি ইসরাইলি নাগরিকদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

এক খোলা চিঠিতে তারা এই আহ্বান জানিয়েছেন, যা বৃহস্পতিবার দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা হারেৎজ-এ প্রকাশিত হয়।

চিঠিতে বলা হয়, "গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষিত কোনো লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। বরং এতে বন্দিদের মৃত্যু, আইডিএফ সেনাদের প্রাণহানি এবং বেসামরিক মানুষের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে।"

চিঠিতে আরও বলা হয়, শুধুমাত্র একটি কার্যকর চুক্তির মাধ্যমেই বন্দিদের নিরাপদে ফেরত আনা সম্ভব। "সামরিক চাপ কার্যত বন্দিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে এবং সেনাদের বিপদে ঠেলে দিচ্ছে।"

এই চিঠিতে গাজা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। চিঠির ভাষায়, “এই যুদ্ধ এখন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই চিঠিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান দান হালুৎসসহ দেশটির বহু বিশিষ্ট সাবেক সামরিক কর্মকর্তাও স্বাক্ষর করেছেন।

সরকারি প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই উদ্যোগকে তীব্রভাবে সমালোচনা করে বলেছেন, "এটি একদল প্রান্তিক চরমপন্থিদের চক্রান্ত, যারা সেনাবাহিনী বা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।"

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ মন্তব্য করেন, "এই চিঠি গাজা যুদ্ধে আমাদের নৈতিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে," এবং তিনি বিমান বাহিনী প্রধানকে বিষয়টি ‘উপযুক্তভাবে’ মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদন ও পদক্ষেপ
হারেৎজ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর প্রধান চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সক্রিয় রিজার্ভ সদস্যদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যদিও এ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে গাজায় অন্তত ৫৯ জন ইসরাইলি বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২২ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে, যার শর্ত ছিল ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি। কিন্তু গত ১৮ মার্চ ইসরাইল গাজায় আবারো ব্যাপক হামলা শুরু করে, যাতে ১,৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৩,৮০০ জন আহত হন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার পরিস্থিতি
বিশ্বজুড়ে এ যুদ্ধের নিন্দা জারি রয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচারের মুখোমুখি।

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬১,৮০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

বিশেষজ্ঞ মতামত
অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই যুদ্ধ কেবল নিরাপত্তাজনিত নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও পরিচালিত হচ্ছে। নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক যুদ্ধ জোরদারের ঘোষণা মার্কিন রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেও অনেকে মনে করছেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর