মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
বৃহস্পতিবার বিমান হামলার বিষয়টি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় একজন উদ্ধারকর্মী এবং একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য।
এই হামলার আগে থেকেই রাখাইনে উত্তেজনা তীব্র হচ্ছিল। আরাকান আর্মি (এএ) নামক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাজ্যটির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। গত বছর, এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাখাইনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দখল নেয় এবং রাজ্যের রাজধানী সিত্তে থেকে অন্যান্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার পতিত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। রাখাইনের সংঘাত এই বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা জানান, বুধবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সেনাবাহিনীর বিমান থেকে রাখাইনের রামরি দ্বীপের কিয়াউক নি মাউ শহরে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলার ফলে ওই এলাকায় আগুন ধরে যায় এবং ৫০০টিরও বেশি বাড়ি পুড়ে যায়। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলায় ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে।
স্থানীয় উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, জান্তাবাহিনীর হামলায় ৪১ জন নিহত এবং ৫২ জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, "পরিবহন ব্যবস্থা কঠিন হওয়ায় এখনই আহতদের চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামও নেই।"
বোমা হামলার পর এলাকার বাসিন্দারা পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মাঝে হাঁটতে দেখা যায়। হামলায় মাটিতে গর্ত সৃষ্টি হয় এবং গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক ভবনের দেয়ালও ভেঙে পড়ে।
এ বিষয়ে জান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে এএফপি, তবে টেলিফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৫ লাখ বেশি। চলতি বছর দেশটিতে সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির এক কোটি ৯৯ লাখ জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এসআর
মন্তব্য করুন: