[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘ব্রেন ডেথ’ কী? কখনো কি এ অবস্থার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:৫৭ পিএম

সংগৃহীত ছবি

‘ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কমৃত্যু শব্দটি অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর।

বাইরে থেকে দেখা যায় রোগী এখনও শ্বাস নিচ্ছেন এবং হৃদ্‌স্পন্দন চলছে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। এটি চিকিৎসা ও আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রেন ডেথ ঘটে, যখন আঘাত বা গুরুতর রোগের কারণে মস্তিষ্ক এবং ব্রেনস্টেম স্থায়ীভাবে কার্যক্ষমতা হারায়। ব্রেনস্টেম শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদ্‌স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে দেখার, শোনার, স্পর্শ অনুভব করার এবং নড়াচড়া করার ক্ষমতা।

মস্তিষ্কের এই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসা ও আইনের দৃষ্টিতে রোগীকে মৃত হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই ব্রেন ডেথ নির্ণয় করতে চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট ও কঠোর নির্দেশিকা অনুসরণ করেন। সম্ভাব্য সব বিকল্প কারণ বাদ দিয়ে একাধিক পরীক্ষা করা হয়।

না। এটি খুবই বিরল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের হাসপাতালে মৃত্যুর মাত্র ২ শতাংশ ব্রেন ডেথের কারণে ঘটে।

মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে রক্ত ও অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। যেকোনো গুরুতর আঘাত বা রোগ যা রক্ত বা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তা ব্রেন ডেথের কারণ হতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  1. গুরুতর মাথায় আঘাত (ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি)
  2. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ)
  3. সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ
  4. ইস্কেমিক স্ট্রোক
  5. হার্ট অ্যাটাক
  6. অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি (হাইপক্সিক ইস্কেমিক ব্রেন ইনজুরি)
  7. মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো সংক্রমণ

যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি চিকিৎসা সংস্থা একত্রিতভাবে ব্রেন ডেথ নির্ণয়ের জন্য নির্দেশিকা দিয়েছে। এর ধাপগুলো হলো—

  1. মস্তিষ্কের ক্ষতির মূল কারণ শনাক্ত ও চিকিৎসা করা
  2. ব্রেন ডেথের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে এমন সব সমস্যা বাতিল করা
  3. ব্রেন ডেথ অনুকরণ করতে পারে এমন পরিস্থিতি বাদ দেওয়া

এরপর প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরা একাধিক পরীক্ষা করেন। প্রাথমিক ফল নিশ্চিত করতে পরীক্ষা একাধিকবারও করা হতে পারে। পরীক্ষা শুরু করার আগে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয় এবং প্রতিটি পরীক্ষার অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়।

পরীক্ষার মধ্যে থাকে—

  • শারীরিক পরীক্ষা
  • ব্রেন এমআরআই ও অন্যান্য ইমেজিং টেস্ট
  • বিস্তৃত স্নায়বিক পরীক্ষা
  • অ্যাপনিয়া টেস্ট

ব্রেন ডেথে রোগী শব্দ, আলো বা স্পর্শে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কোনো নড়াচড়া থাকলেও তা ইচ্ছাকৃত নয়। চিকিৎসকেরা চোখ, গলা ও অন্যান্য স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করেন।

মৃত্যুর আগে রোগী নিজে শ্বাস নিতে পারেন না। এই পরীক্ষায় কিছুক্ষণের জন্য ভেন্টিলেটর বন্ধ করে দেখা হয়, রোগী নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন কি না।

পরীক্ষার ফল পরিবারকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়। স্পষ্টভাবে বলা হয়—ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। চিকিৎসকরা পরিবারকে সময় দেন, প্রশ্নের সুযোগ দেন। পরবর্তী করণীয় যেমন ভেন্টিলেটর বন্ধ করা, পরিবারের সম্মতিতে করা হয়।

কোমায় থাকা ব্যক্তি অচেতন হলেও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন, যেমন আলোতে চোখের পলক বা মাথা ঘোরানো। বেশিরভাগ মানুষ দুই সপ্তাহের মধ্যে কোমা থেকে বের হন। ব্রেন ডেথে কোনো প্রতিক্রিয়া থাকে না। এটি স্থায়ী অবস্থা, চেতনা কখনো ফিরে আসে না।

না। একবার ব্রেন ডেথ নিশ্চিত হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোগী মৃত। কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়।

সরাসরি না। তবে দ্রুত চিকিৎসা পেলে কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতি আংশিকভাবে রোধ করা যেতে পারে। একবার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করলে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

ভেন্টিলেটর শ্বাস ও হৃদ্‌স্পন্দন সাময়িকভাবে চালু রাখতে পারে। তাই অনেক সময় রোগীকে জীবিত মনে হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মৃত। চিকিৎসকেরা এই বাস্তবতা গভীরভাবে বোঝেন এবং ব্রেন ডেথ ঘোষণার আগে পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর