কাতার থেকে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদার করতে কাতারের রাজধানী দোহায় আজ শুরু হয়েছে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ১১তম সম্মেলন (CoSP11)।
আজ শুরু হয়ে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই সম্মেলন। এতে বিশ্বের ১৯২টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিসহ প্রায় আড়াই হাজার অংশগ্রহণকারী যোগ দেবেন। সম্মেলনে সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, দুর্নীতিবিরোধী বিশেষজ্ঞ ও যুব প্রতিনিধিদের উপস্থিতির থাকবে।
দুর্নীতিকে বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (UNCAC) হলো দুর্নীতি মোকাবিলায় একমাত্র আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক কাঠামো। এই কনভেনশন দুর্নীতি প্রতিরোধ, অপরাধীকরণ ও আইন প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং কারিগরি সহায়তা ও তথ্য বিনিময়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনো দুর্নীতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ বৈশ্বিক জনসংখ্যা এমন দেশে বসবাস করছে যেখানে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বচ্ছতার অভাব এবং ঘুষ এখনো বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির প্রধান চিত্র হিসেবে রয়ে গেছে।
দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের সক্রিয় ভূমিকার অংশ হিসেবে এই সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে কাতার। দেশটির Administrative Control and Transparency Authority (ACTA) সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান আয়োজক। সংস্থাটির সভাপতি হামাদ বিন নাসের আল-মিসনাদ জানান, এই আয়োজন কেবল অর্জন পর্যালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন দিকনির্দেশনা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
এই সম্মেলনের পাশাপাশি প্রায় ১২০টি অফিসিয়াল সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পঞ্চম অ্যান্টি-করাপশন একাডেমিক ফোরাম, যেখানে দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা উপস্থাপন করবেন বিভিন্ন দেশের গবেষক ও শিক্ষাবিদরা। সম্মেলনে একাধিক খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথাও রয়েছে।
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এখন আর কোনো একক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ ধরনের বৈশ্বিক সম্মেলন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “দোহায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক পর্যায়ে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে দুর্নীতি দমন, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং টেকসই উন্নয়নের পথে বাস্তব অগ্রগতি সম্ভব। দোহায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন সেই লক্ষ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন অঙ্গীকার ও সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: