দোহা থেকে এম এ রনী: দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (AI) উদীয়মান প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন।

জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (UNCAC)-এর অধীনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স অব দ্য স্টেটস পার্টিজ (COSP)-এর একাদশ অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক বলেন, “দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং একে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। আমরা যাদের সেবা করি, তাদের প্রতিই এই দায়বদ্ধতা।”
ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “দুর্নীতি কোনো ভুক্তভোগীহীন অপরাধ নয়। এটি সংঘাতকে উসকে দেয়, বৈষম্যকে গভীর করে এবং মানুষ ও পৃথিবী রক্ষায় প্রয়োজনীয় সম্পদ কেড়ে নেয়। অর্থনৈতিক অপরাধে হারানো প্রতিটি ডলার একটি ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন থেকে চুরি করা অর্থ।”
তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উদীয়মান প্রযুক্তি একদিকে দুর্নীতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, আবার সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে এসব প্রযুক্তিই দুর্নীতি শনাক্ত ও প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ দমন কার্যালয়ের (UNODC) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জন ব্র্যান্ডোলিনো বলেন, “দুর্নীতি অপরাধী চক্রগুলোর জন্য একটি অবৈধ অবকাঠামো তৈরি করে, যার মাধ্যমে তারা নির্বিঘ্নে বিশ্বজুড়ে কার্যক্রম চালাতে ও মুনাফা অর্জন করতে পারে।”
তিনি দুর্নীতি ও সংগঠিত অপরাধ দমনে সীমান্ত পেরিয়ে সমন্বিত ও সমন্বয়মূলক উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে UNODC-এর দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ ও সরঞ্জামগুলো সর্বোচ্চভাবে ব্যবহারের আহ্বান জানান।
‘Shaping Tomorrow’s Integrity’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে বিশ্বের ১৭০টি রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিসহ ২,৫০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত রয়েছেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জাসিম আল থানি। এছাড়া বক্তব্য দেন দশম অধিবেশনের বিদায়ী সভাপতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস্টিন ক্লাইন, একাদশ অধিবেশনের নবনির্বাচিত সভাপতি কাতারের হামাদ বিন নাসের আল-মিসনাদ এবং UNODC-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জন ব্র্যান্ডোলিনো।

সম্মেলনে আলোচনার জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— দুর্নীতি প্রতিরোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা, শিশু ও তরুণদের মধ্যে সততা ও নৈতিকতা জোরদার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন প্রচারের অর্থায়নে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং মানবপাচার, পরিবেশগত অপরাধ ও অভিবাসী পাচারের মতো অপরাধে দুর্নীতির ভূমিকা বিশ্লেষণ।
দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন সম্পর্কে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (UNCAC) হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র বৈশ্বিক ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া এই কনভেনশনে বর্তমানে ১৯২টি দেশ পক্ষভুক্ত।
এই কনভেনশনের আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার, লুণ্ঠিত সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং সরকারি-বেসরকারি খাতে তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বিনিময়ে আইনগতভাবে বাধ্য।
২০১০ সাল থেকে চালু থাকা Implementation Review Mechanism (IRM)-এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৪৬টি দেশ নতুন দুর্নীতিবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন বা হালনাগাদ করেছে।
প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত Conference of the States Parties (COSP) কনভেনশনের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম হিসেবে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এসআর
মন্তব্য করুন: